‘গরমিল তথ্য’ উদঘাটন করে দিল ক্লুলেস হত্যার রহস্য
চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির একটি বাসার সেপটিক ট্যাঙ্কি পরিষ্কারের সময় ভেতর থেকে অজ্ঞাতপরিচয় নারীর গলিত মরদেহ উদ্ধারের দুই মাস পর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সন্দেহজনক আসামির প্রাপ্ত তথ্য এবং সিডিআরে প্রাপ্ত তথ্য গরমিলের সূত্র ধরে পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে।
পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি শওকত আলীকে (৬৫) সোমবার (১৩ জুন) খুলশী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শওকতকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, নিহত নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। নাম লিপি আক্তার, বাড়ি বরিশালে। পারিবারিক বিরোধের জের ধরে ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মরদেহ সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দিয়েছিল শওকত।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (১৩ জুন) নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আলী হোসেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, গত ৭ এপ্রিল পাঁচলাইশ থানার নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির একটি বাসার সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের সময় ভেতরে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর গলিত মরদেহ পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়েরের পর মরদেহের পরিচয় শনাক্ত, হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন এবং আসামি গ্রেপ্তারের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। ২৯ মে মামলাটি তদন্তের ভার ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের কোনো ধরনের ক্লু না থাকায় বেশি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়। মরদেহ বিকৃত, গলিত এবং দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাছাড়া আশপাশের সিসিটিভিতে দীর্ঘদিনের ফুটেজ সংরক্ষিত না থাকায় অপরাধীকেও চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছিল না।
একপর্যায়ে ঘটনাস্থলের পাশে থাকা এমজিএইচ গ্রুপের অফিসের সব স্তরের স্টাফদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তের অংশ হিসেবে স্টাফদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করা হয়। বেশিরভাগ স্টাফকে নজরদারিতে রাখা হয়। এর মধ্যে কয়েকজন স্টাফের মোবাইল ফোনের কললিস্ট নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এর মধ্যে শওকতের প্রাপ্ত তথ্য এবং সিডিআরে প্রাপ্ত তথ্য গরমিল পাওয়ায় তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর সে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করে। পরে তাকে খুলশী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান উপ-পুলিশ কমিশনার।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার শওকত আলী এমজিএইচ গ্রুপের নাসিরাবাদ শাখার ক্লিনার হিসাবে নিযুক্ত ছিল। সেপটিক ট্যাঙ্কিতে পাওয়া মরদেহ লিপি আক্তার নামে এক নারীর, তিনি আসামি শওকতের দ্বিতীয় স্ত্রী। তাদের মধ্যে ২০১৩ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের আনুমানিক ৩-৪ বছর পর ফের তারা একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করে আসছিলেন। পারিবারিক কলহের জের ধরে ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর শওকত হোসেন তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে তার ভাড়া বাসায় হত্যা করে। এরপর ভিকটিমের মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে কৌশলে অটোরিকশাযোগে নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ৩ নং রোডের ৬ নং বাসার অফিসে এনে সেপটিক ট্যাঙ্কিতে ফেলে দেয়।
ভিকটিমের আংশিক পরিচয় পাওয়া গেছে। তার বিস্তারিত পরিচয় শনাক্তের জন্য তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জহিরুল ইসলাম, হকারী পুলিশ কমিশনার (ডিবি-উত্তর) মো. কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
কেএম/জেডএস