গেল দুই বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে রাজধানীর কোরবানির হাট-কেন্দ্রিক উৎসবের আমেজে নানা বিধিনিষেধ জারি করে লাগাম টানা হয়েছিল। সে কারণে উৎসবে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। তবে এবার কোরবানির পশুর হাটে আমেজ থাকবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে এবার রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় দুটি স্থায়ী হাটসহ মোট ২০টি হাট বসছে। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এবার উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় বসছে আটটি অস্থায়ী পশুর হাট। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় বসছে ১০টি অস্থায়ী পশুর হাট। এছাড়া ডিএনসিসির গাবতলী ও ডিএসসিসির সারুলিয়া স্থায়ী হাটেও কোরবানির পশু বেচাকেনা হবে।

এদিকে কোরবানির পশুর হাটে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। কোরবানির পশুর হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্টদের বৈঠকও হয়েছে। অন্যবারের মতো এবারও কোরবানির পশুর হাটে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের দুটি স্থায়ী ও ১৮টি অস্থায়ী পশুর হাটে গোয়েন্দা নজরদারি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। হাটগুলোতে পুলিশ ও র‍্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া হাটে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে।

কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পশুর হাটে অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাই চক্র প্রতিরোধে ইউনিফর্মের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া প্রতিটি পশুর হাটে ওয়াচ টাওয়ার ও অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোলরুম স্থাপনের প্রস্তুতি চলছে ডিএমপির।

অন্যদিকে জাল টাকার বিস্তার রোধ ও পশুর হাটে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, পকেটমার ও অন্যান্য অপরাধীদের তৎপরতা বন্ধ করতে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পশুর হাটকেন্দ্রিক মানি এস্কর্ট ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে জাল নোট শনাক্ত করার মেশিন।

ডিএমপি আরও জানায়, কোরবানির পশুর হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কন্ট্রোলরুম এবং প্রতিটি থানায় মানি এস্কর্ট টিম স্ট্যান্ডবাই থাকবে। পশুর হাটে যেন বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সেজন্য চৌহদ্দির বাইরে হাট বসতে দেওয়া হবে না। এছাড়া হাটগুলোতে যেন নির্ধারিত স্থানেই হাসিল আদায় করা হয় সে ব্যবস্থাও করবে ডিএমপি। 

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তা জানান, কোরবানির পশুর হাটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে দ্রুতই ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য জানাবেন। ৬ জুলাই থেকে কোরবানির পশুর হাটে পুরোপুরি বেচাকেনা শুরু হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে পশুর হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিএমপিকে নির্দেশ দিয়েছে। সেই অনুযায়ী কাজ করার লক্ষ্যে ডিএমপি প্রস্তুতি নিচ্ছে, প্রস্তুতি শেষ দিকে রয়েছে।

রাজধানীর সবচেয়ে জমজমাট পশুর হাটগুলোর মধ্যে অন্যতম গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাট। এই হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় রাজধানীর অন্য সব হাটের তুলনায় বেশি। ইতোমধ্যে এই পশুর হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেপারিরা কোরবানির পশু নিয়ে আসতে শুরু করেছেন। এছাড়া হাটে নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজধানীর অন্যতম বড় কোরবানির পশুর হাট গাবতলী। এখানে এখনও কোরবানির পশু বেচাকেনা শুরু হয়নি। তবে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। হাট এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া হাটে অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোলরুম ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়া সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে অন্যবারের মতো এবারও হাট এলাকায় নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করবে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। কোরবানির প্রতিটি পশুর হাটে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে অন্য সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে র‍্যাব। রাজধানীর প্রতিটি কোরবানির পশুর হাটে র‍্যাবের কন্ট্রোলরুম, ওয়াচ টাওয়ার ও টহল টিম থাকবে।

এ বিষয়ে র‍্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক (এএসপি) আ ন ম ইমরান খান বলেন, কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে র‍্যাব। কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অজ্ঞান, মলম পার্টি, জাল টাকা ছড়ানো রোধে ইউনিফর্মে ও সাদা পোশাকে কাজ করবে র‍্যাব। পশু আনা নেওয়া করা ট্রাকে যেন রাস্তায় কোনো ধরনের ছিনতাই বা চাঁদাবাজির ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যেও রাস্তায় র‌্যাবের গাড়ি টহল দেবে।

বুধবার (২৯ জুন) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে এবং শিল্পাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সভায় শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিদ্যমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কোরবানির পশুর হাটে মাস্ক পরে ঢুকতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। ঢাকায় ২০টিসহ সারা দেশে ৪ হাজার ৪০৭টি পশুর হাট বসবে। সংখ্যা হয়তো দুএকটা কমবেশি হতে পারে। হাটগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকবে। পশুর হাটের টাকা পুলিশের সহযোগিতায় বহন করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। কাঁচা চামড়া বিদেশে যাতে পাচার না হতে পারে, সেদিকেও নজরদারি থাকবে।

এমএসি/এসএসএইচ