হাট ভরা গরু, নেই ক্রেতা
রাজধানীর বড় হাটগুলোর মধ্যে অন্যতম ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ভাটারা সাঈদ নগর হাট। এবারও বিক্রি শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময়ের আগেই এ হাটটি গরুতে ভরে গেছে। তবে ক্রেতাদের আগমন বলতে গেলে এখনও শুরু হয়নি। পুরো হাট ভরা গরু, আরও কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা গরু আনবেন এখানে। যদিও বিক্রেতারা বলছেন এবার গরুর দাম অন্যবারের তুলনায় বেশি যাবে।
সোমবার (৪ জুলাই) সকালে সাঈদ নগর বালুর মাঠ হাটে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাটটিতে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু এনেছেন পাইকাররা। তারা হাটে গরু রেখে অলস সময় কাটাচ্ছেন। পর্যাপ্ত গরুর আমদানি রয়েছে এ হাটে। তবে ঈদের এখনও বেশ কিছুদিন বাকি থাকায় আনুষ্ঠানিক বিক্রি শুরু হয়নি। ক্রেতাদের আগমনও নেই হাটটিতে।
বিজ্ঞাপন
বিক্রেতারা বলছেন, ইতোমধ্যে হাটটিতে অধিকাংশ গরু চলে এসেছে, বাকি কয়েক দিনেও আরও বেশ কিছু গরু আসবে। তবে বিক্রি শুরু হয়নি একদমই। কিন্তু পশুর খাদ্যের খরচ অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার গরুর দাম বাড়তি যেতে পারে।
বিজ্ঞাপন
হাটটিতে ঘুরে কথা হয় বেশ কিছু গরু বিক্রেতা ও পাইকারদের সঙ্গে। তাদের মধ্যে একজন আনোয়ার হোসেন। তিনি কুষ্টিয়া থেকে ১৫টি গরু এ হাটে এনেছে। আনোয়ার হোসেন বলেন, হাটে ইতোমধ্যে প্রচুর গরু এসেছে তবে বিক্রি এখনও শুরু হয়নি। যদিও আমার একটি গরু বিক্রি হয়ে গেছে, তবে অন্যরা এখনও বিক্রি শুরু করতে পারেনি। ঈদের দুই তিনদিন আগ থেকে মূলত বেচা বিক্রি শুরু হবে। এখন প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাক ভরে গরু আসছে এখানে।
এবার গরুর দাম বাড়বে উল্লেখ করে এ বিক্রেতা বলেন, গরুর খাবারের দাম অনেক বেশি, একবছরে বলতে গেলে খাবারের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে আমাদের কেনা দামও বেশি পড়েছে, তাই বিক্রিও করতে হবে বেশি দামেই। এছাড়া গরু পরিবহনের ট্রাক ভাড়া, রাস্তার খরচ, আবার এখানে ৭ থেকে ৮ জন মিলে এসেছি এর একটা খরচ আছে প্রতিদিনের। সব মিলিয়ে এবার গরুর দাম বেশি যাবে।
আরও পড়ুন : নবাব-সুলতান-লাল বাহাদুরের সঙ্গে খাসি ফ্রি
পাবনা থেকে ২০টি গরু এনেছেন পাইকারি ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এবার মাঝারি সাইজের গরুর দাম বেশি যাবে। এক থেকে দেড় লাখ টাকার গরুর চাহিদা বেশি থাকে প্রতিবার। এবারও তাই থাকবে ফলে এই সাইজের গরুর দাম বেশি যাবে। প্রচুর গরু ইতোমধ্যে এই হাটে এসে পৌঁছেছে। প্রতি গরুর জন্য বলতে গেলে একজন করে লোক লাগছে দেখা শোনা, খাওয়ানোর জন্য। তাই গরু বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত এসব লোকগুলোকে হাটে থাকতেই হবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা লাভের আশাতেই এসেছে হাটে কিন্তু সব কিছুর খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ এবার বেশি না হলেও গরুর দাম বাড়তি যাবে।
তিনি আরও বলেন, বলতে গেলে হাটে এখনও কোন ক্রেতা আসতে শুরু করেনি। বিকেলের দিকে অল্প সংখ্যক ক্রেতারা হাটে আসে এবং দাম শুনে ঘুরে দেখে যায়। হাট শুরু হতে এখনও দুই তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে। এদিকে প্রচুর গরম পড়ায় গরু নিয়ে খুব সমস্যা হচ্ছে। সব সময় ফ্যান দিয়ে বাতাস দিতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন : নাম তার মন্টু, খায় খড়-ভুসি, দাম ২০ লাখ
কিশোর সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে হাটে এসেছেন সাজেদুর রহমান নামের একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, আসলে গরুর কোন ক্রেতা হাটে দেখলাম না আজ। আমরা নিজেরাও গরু দেখতে, দাম শুনতে হাটে এসেছি। ছেলেকে গরু দেখাতেই মূলত আশা। আর আমরা যারা ঢাকার মানুষ তারা এত আগে কখনই গরু কিনি না, কারণ গরু রাখার স্থানের সমস্যা আমাদের সবার। মূলত হাট জমবে ৭, ৮, এবং ৯ তারিখে। ওই দিনগুলোতে গরু বিক্রি হবে। আর তার আগ পর্যন্ত হাটে তেমন কোনো ত্রেতা আসবেন না।
সাঈদ নগর বালুর মাঠ হাট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা নাজিম উদ্দিন নামে এক সদস্য বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে যাবতীয় কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। গরু বিক্রেতাদের জন্য সব ধরনের আয়োজন আমরা করেছি। তবে এখনও সেভাবে ক্রেতা আসতে শুরু করেনি। হাট দুই-তিন দিনের মধ্যেই জমে উঠবে। আমাদের এখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রচুর সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবী এখানে কাজ করছে। গরু রাখার জন্য বাঁশ দিয়ে জায়গা করা আছে, উপরে ত্রিপল টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে, পাইকারদের থাকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। প্রতিদিনই প্রচুর পরিমাণে গরু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের হাটে আসছে। আমার দেখা মতে হাটে মাঝারি মাপের গরুর সংখ্যাই বেশি।
এএসএস/আইএসএইচ