লাখ টাকার নিচে গরু নেই আফতাব নগর হাটে
রাজধানীর আফতাব নগর পশুর হাটে এবারের কোরবানি ঈদে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার গরু বেচাকেনার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ঈদের বাকি আর পাঁচ দিন। এখন পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ হাজার গরু এসেছে এ হাটে। এসব গরুর দাম সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা। গরু থাকলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি একবারেই নেই।
হাট কর্তৃপক্ষ বলছে, আজ-কালকের মধ্যে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজার গরু হাটে আসবে। পর্যাপ্ত গরু এলেই ক্রেতারাও হাটে আসতে আকৃষ্ট হবেন, বিক্রিও শুরু হবে। ব্যবসায়ীদেরও প্রত্যাশা আজ-কাল টুকটাক বিক্রি হলেও বুধ ও বৃহস্পতিবার থেকে বিক্রি হবে পুরোদমে।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (৪ জুলাই) রাজধানীর আফতাব নগরে হাটে গিয়ে দেখা গেছে, হাটের বেশিরভাগ জায়গাই ফাঁকা। তবে কিছুক্ষণ পর পর ট্রাকভর্তি গরু হাটে আসছে। ট্রাক থেকে গরু নামানোর পর হাট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বাঁশের খুঁটি নিয়ে কেউ কেউ গরু রাখার জন্য গর্ত করে খুঁটি বসাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
আবার কেউ কেউ ঘরের মতো করে উপরে ত্রিফল কিংবা পলিথিনের কাগজ টানানো হচ্ছে। ঘরের মতো তৈরি করে গরুগুলো সারিবদ্ধভাবে খুঁটিতে বাঁধা হচ্ছে। যারা গত দুই-তিনদিন ধরে মাঠে অবস্থান করছেন তাদের কেউ কেউ গরুর রাখার জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন। আবার কেউ কেউ গরুকে গোসল করাচ্ছেন কিংবা পানি দিয়ে মুছে দিচ্ছেন। এসময়ে যারা গরু দেখতে এসেছেন তারা দাম জিজ্ঞেস করছেন। দাম যাচাই-বাছাই করছেন। কিন্তু কিনছেন না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিকেলে ক্রেতাদের উপস্থিত বাড়বে।
আরও পড়ুন>> সড়ক-মহাসড়কে পশুর হাট বসানো যাবে না
পূর্ব বাড্ডা থেকে গরু দেখতে আসা মাইনুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে দাদা ভাইয়ের সঙ্গে হাঁটতে এসেছিলাম। তখন তিন-চারটি গরু দেখেছিলাম। এখন আব্বা ও আম্মাকে নিয়ে দেখতে এসেছি। পছন্দ হলে ভাইয়া অফিস থেকে এলে কেনার জন্য দরদাম করব।
তিনি বলেন, এখন জায়গা ফাঁকা, মাঠ দিয়ে হাঁটা চলা করা যায়। কিন্তু এক-দুদিন পর আর এই জায়গা দিয়ে চলাফেরা করা যাবে না। তাই আব্বা-আম্মাকে নিয়ে এসেছি। স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারছি।
চুয়াডাঙ্গার আলম নগর থেকে পাঁচটি গরু নিয়ে আসা আহাদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, চার বছর ধরে এই হাটে গরু আনি। এবার এনেছি পাঁচটি। গতবার এনেছিলাম সাতটি, বিক্রি হয়েছিল পাঁচটি। আর দুটি বিক্রি হয়নি। এই দুটি বাড়িতে নিয়ে বিক্রি করেছি। এখান থেকে আরও বেশি লাভ হয়েছে।
তিনি বলেন, এবার পাঁচটি এনেছি। ১৬ লাখ টাকা হলে বিক্রি করে দেব। তিনি বলেন, পাঁচটি গরুর মধ্যে এক জোড়া ষাঁড় বিক্রি করার ইচ্ছে ১২ লাখ টাকা। তবে একটু কম বেশি হতে পারে। এই দুটির মধ্যে একটি ষাঁড়ের দাম চাইছি ৭ লাখ। এই ষাঁড়ে ২০ মণ মাংস হবে। জোড়ার অপর ষাঁড়টির দাম চাইছি ৫-৬ লাখ টাকা। এটাতে ১৬-১৭ মণ মাংস হবে।
আরও পড়ুন>> ঢাকার উত্তরে এবার ৮ হাট, দক্ষিণে ১০
বাকি তিনটির মধ্যে দুটি ষাঁড়ের ১০-১২ মণ করে মাংস হবে। এই দুটি চার-পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চাইছি। আর ৩-৪ মণ মাংস হবে এমন ষাঁড়টি দেড় থেকে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চাইছি। পুরোনো এই ব্যবসায়ী বলেন, এবার চেপে ধরে রাখব না, বিক্রি করে চলে যাব।
তিন বছর ধরে এই হাটে গরু বিক্রি করতে আসা কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার ২৩টি গরু আনছি। ৫০ হাজার ৬০ হাজার টাকা লাভ হলেই বিক্রি করে চলে যাব। দৌলতপুরের এই ব্যবসায়ী বলেন, দুদিন হলো এখনে এসেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ক্রেতার দেখা পাইনি।
নাটোরের খামারি হেলাল উদ্দিন বলেন, চার বছর ধরে এই হাটে গরু বিক্রি করি। গত বছর বিক্রির পর গত ৯ মাস থেকে এক বছর লালন-পালন করে এবার ১০টি গরু হাটে এনেছি। তিনি বলেন, আমার টার্গেট এবার ৩০ লাখ টাকা বিক্রির। আশা করছি বিক্রি করতে পারব।
আরও পড়ুন>> কোরবানির পশুর হাটে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেনের উদ্বোধন
মেহেরপুরে ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, দুদিনে ২৭টি গরু এনেছি। এবার ১০০টি গরু হাটে আনব। বাকি গরু কাল-পরশু চলে আসবে। তিনি বলেন, আমরা গরুগুলো গত দুই তিন মাস ধরে এলাকা থেকে কিনেছি। আমাদের গরুগুলো দেশি ও ছোট, তবে লাখ টাকার নিচে কোনো গরু নেই।
বাজারে আসা বড় গরুর মধ্যে রয়েছে চাঁদপুরের ‘মুন্না ভাই’। ব্রাহমা জাতের ষাঁড়টির ওজন ১১শ কেজি। দাম হাঁকানো হচ্ছে ১১ লাখ টাকা। কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে আসা ‘শেহের খানের’ দাম হাঁকানো হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা। অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান গরুটির ওজন ৪০ মণ। মাংস হবে ৩০ মণ। এছাড়াও ‘কালো মানিক’ ১০ লাখ, ‘বস’ ৮ লাখ, ‘লাল মানিক’ ৮ লাখ, ‘রশিদ বাবু’র ৬ লাখ টাকা দাম হাঁকানো হচ্ছে। এসব বড় গরু এ হাটে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে বলে জানায় হাট কর্তৃপক্ষ।
গরু হাটের ইজারাদার মিজানুর রহমান ধনু ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর হাটে ৪০ হাজার গরু এসেছিল। এর মধ্যে ২৫-৩০ হাজার বিক্রি হয়েছিল। ১০-১৫ হাজার অবিক্রিত ছিল। এবার আমাদের টার্গেট ৩০-৩৫ হাজার গরু কেনা-বেচার। এরই মধ্যে ৮-১০ হাজার গরু এসেছে। আগামী দুদিনের মধ্যে আরও ১৫-২০ হাজার গরু বাজারে আসবে। ব্যবসায়ীদের সব সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি আমরা।
তিনি বলেন, এখনও ক্রেতাদের উপস্থিতি কম। কাল-পরশু থেকে জমবে হাট। কেনা-বেচা শুরু হবে। ধনু বলেন, এবার ১৫টি হাসিল রাখা হয়েছে। গরুগুলোর অবস্থা দেখার জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক রয়েছে। আমাদের স্বেচ্ছাসেবক কর্মী রয়েছে। যখন যাদের যা প্রয়োজন ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এমআই/এসএসএইচ