এগ্রো ফার্মের কারো ভালো, কারো মন্দ
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে চলছে শেষ সপ্তাহের প্রস্তুতি। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বসেছে কোরবানির পশুর হাট। পাশাপাশি বিক্রি চলছে এগ্রো ফার্মগুলোতেও। তবে বেচাকেনা নিয়ে মিশ্র তথ্য দিয়েছেন এগ্রো ফার্মের মালিকরা। কেউ বলছেন, খামারের অধিকাংশ গরুই বিক্রি হয়ে গেছে। আবার কেউ বলছেন, এখনও গড়ে ৫০ শতাংশ গরু বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় সাদিক এগ্রো, মেঘডুবি এগ্রো, আল মদিনা ক্যাটেল ফার্ম ও রাখাল বাড়ি এগ্রো ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
বিজ্ঞাপন
বড় ফার্মের মালিকদের দাবি, অধিকাংশ গরুই বিক্রি হয়ে গেছে। আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ গরু বিক্রি হয়ে গেছে। ভিন্ন কথা বলছেন, ছোট ফার্মের মালিকরা। তাদের দাবি, গতবারের তুলনায় এবার বাজারে ক্রেতা কম। তাদের ৫০ শতাংশ গরু এখনো বিক্রি হয়নি। শেষ পর্যন্ত কত শতাংশ গরু বিক্রি করা যাবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলায় মেঘডুবি এগ্রোর ৪ নম্বর শাখায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের গবাদি পশুর পরিচর্যা করছেন সেখানকার কর্মীরা। খাবার দেওয়ার পাশাপাশি গোসল করানো হচ্ছে। এখানে ৬০ হাজার থেকে শুরু করে ১০ লাখ টাকা মূল্যের গরু পাওয়া যাচ্ছে।
আরও পড়ুন : ২২ মাসের বিক্রমের ওজন ৮৮০ কেজি
সেখানেই কথা হয় মেঘডুবি এগ্রোর সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ তারেক মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের ৯০ শতাংশ পশু এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। বাজার আমাদের ভালো গেছে, আলহামদুলিল্লাহ। গরুর দাম একটু বেশি অন্য বারের তুলনায়। কারণ মাংসের দাম বেশি। ক্রেতারা এটা গ্রহণ করেছেন।
তিনি জানান, রাজধানীর ৫টি, কুষ্টিয়া, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, শ্রীমঙ্গলসহ সারাদেশের ১৫টি শাখায় কোরবানির ঈদ উপলক্ষে প্রায় ১ হাজার ৭০০ গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। কোনো পশুর হাটে এসব গরু বিক্রি করা হবে না। শুধুমাত্র মেঘডুবির নির্ধারিত শাখা থেকেই কোরবানির পশু ক্রয় করা যাবে। যেকোনো ক্রেতা ঈদের পর দিন পর্যন্ত খামারে রাখার সুবিধাসহ বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার সুবিধা পাবেন।
মেঘডুবি এগ্রোর সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ তারেক মাহমুদ বলেন, আমরা সাধারণত ভুষি খাওয়াই না। মৌসুমি বিভিন্ন ধরনের ফসল খাওয়াই।
গরুর সৌন্দর্যের ওপর মূল্য নির্ধারণ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, গরুর সৌন্দর্য ওপর মূল্য নির্ধারণ করা হয়। আপনি লাইভ ওজন করে কোরবানির জন্য গরু কিনতে পারেন না। আমরা ওইভাবে গরু বিক্রি করি না।
বেড়িবাঁধ সংলগ্ন আল মদিনা ক্যাটেল ফার্মের পরিচালক সামিউল এহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেচা কেনা এখনো শুরু হয়নি। আশা করছি ভালো হবে। ফার্মে বিভিন্ন জাতের মোট ৫৫০ গরু রয়েছে। সর্বনিম্ন ৮০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে। ৪০০ কেজির কম প্রতিটি গরু লাইভ ওয়েট ৪৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ৪০০ কেজির ওপরে হলেই তা আর কেজিতে নয় বিক্রি হচ্ছে দামাদামি করে।
তিনি বলেন, গত বছরের এই সময়ে খামারের অন্তত ৭০ শতাংশ গরু বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এবার এখনো ৫০ শতাংশ বিক্রি হয়নি। গত বছর মাংসের কেজি ছিল ৬০০ টাকা। এবার ৭৫০ টাকা। দাম তো সেভাবেই নির্ধারণ হবে।
আরও পড়ুন : গাবতলী কাঁপাচ্ছে বিগ শো, বাংলার ডন ও বাংলার বস
বেড়িবাঁধ এলাকায় দেখা যায়, তোরণ নির্মাণ করে গরু ছাগল বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। তোরণ থেকে ভেতরের দিকে পুরো এলাকাজুড়ে করা হয়েছে লাইটিং। এমন প্রস্তুতি দেখা যায় সাদিক এগ্রোর। সেখানে উট, দুম্বা, বিভিন্ন জাতের গরু, সাদা রঙের মহিষ, বিভিন্ন জাতের ছাগল রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোহাম্মদ ইমরান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এ বছর গরু আছে ২ হাজার। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা মিলে আরও আছে ১ হাজার ৫০০ হবে। এখনো পর্যন্ত ৭০ শতাংশ বিক্রি হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, গত দুই বছর তো আমরা করোনার ভেতর দিয়ে গেলাম। এবার তুলনামূলক করোনার প্রভাব সারা পৃথিবীতে কম, বাংলাদেশেও কম। আমরা সেই হিসেবে আশা করছি, গত দুই বারের তুলনায় এবার একটু হলেও ভালো হবে।
কোরবানিযোগ্য প্রাণী লাইভ ওয়েটে বিক্রি করা হচ্ছে জানিয়ে ইমরান বলেন, ৪০০ কেজির কম ৪৭৫ টাকা কেজি, ৪০১ থেকে ৫০০ কেজি ৫২৫ টাকা কেজি ৫০১ থেকে ৬০০ কেজি ৫৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। ডেলিভারিসহ এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। কোনো বাড়তি পেমেন্ট নেই। সর্বনিম্ন ১ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৩৬ লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে।
রাখালবাড়ি এগ্রোর পরিচালক হাসনাইন আহমেদ ফয়সাল বলেন, আমাদের ৬০ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দামের ৬০টি গরু রয়েছে। এ পর্যন্ত ৪০ শতাংশ বিক্রি হয়েছে। মূলত দাম বেশির কারণেই ক্রেতারা একটু পিছিয়ে থাকছেন। লাইভ ওয়েট করে আমরা বিক্রি করি না।
এইউএ/এসকেডি