নির্বাচনী হলফনামায় রাজনৈতিক নেতা বা প্রার্থীর সম্পর্কে মামলার তথ্য প্রকাশ করার বিপক্ষে মত দিয়েছে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। দলটি মনে করে, এটা প্রার্থীকে জনগণের কাছে হেয় করার একটা ষড়যন্ত্র।

বুধবার (২৭ জুলাই) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে বসে এ প্রস্তাব দেয় দলটি। সংলাপে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম ও তার দলের অন্য নেতৃবৃন্দ, সিইসি ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত প্রস্তাব উত্থাপন করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক। এতে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন আবু হেনা কমিশন নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে সক্ষম হয়। কিন্তু ১৯৯৯ সনের ১৫ নভেম্বর টাঙ্গাইল-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি মাগুরা উপ-নির্বাচনের কলঙ্ককেও ম্লান করে দেয়। নির্দলীয় সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে যে কমিশন সক্ষম, সেই একই কমিশন দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। যার ফলে এটা স্পষ্ট যে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা বা যোগ্যতার চেয়েও সরকারের নিরপেক্ষতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ মনে করে, নির্বাচনকালীন সরকার এবং প্রশাসন দল নিরপেক্ষ না হলে কোনোভাবেই নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব নয়।

নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত রয়েছে, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ প্রথম থেকেই সেগুলো আরও শিথিল করার পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেছে। তাই নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত আরও শিথিল করার মাধ্যমে নতুন নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বর্তমান কমিশন ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করি।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে টাকার প্রভাব কমাতে দেশের সকল রাজনৈতিক, পেশাজীবী ও অন্যান্য সংগঠনগুলো ঐক্যমত্য পোষণ করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য নির্বাচনে টাকার প্রভাব বাড়াতে অতীতে নির্বাচন কমিশন সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। প্রার্থী হওয়ার জামানত বৃদ্ধি তার বড় প্রমাণ।

ঝুলিয়ে পোস্টার লাগানোর সিদ্ধান্তের মাধ্যমেও নির্বাচনী খরচ বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। শীত-বর্ষায় পোস্টারের নিরাপত্তার স্বার্থে সকল প্রার্থীকেই পোস্টারের ওপর আবার পলিথিনের কভার ব্যবহার করার প্রয়োজনে পোস্টারের খরচ তিন থেকে চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া নির্বাচনী পোস্টারের পরিত্যক্ত পলিথিন পরিবেশের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নির্বাচনী আচরণবিধিতে প্রচারে মাইক ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি যানবাহনে একটি মাইক ব্যবহারের বিধান রয়েছে। অথচ একটি যানবাহনের সামনে পেছনে একই সঙ্গে দুটি মাইক ব্যবহার করা হলে একই সঙ্গে কম খরচে বেশি মানুষের কাছে প্রার্থীর প্রচার করা সম্ভব।

এছাড়া হলফনামায় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার বিবরণ দিয়ে জনসমক্ষে ‘ক্রিমিনাল’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দুরভিসন্ধি ও রাষ্ট্রকে বিরাজনীতিকরণের ষড়যন্ত্র থেকেই এ বিধানের উদ্ভব বলে আমরা মনে করি। জনগণের পক্ষে কর্মসূচি পালনকারী প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মী সবকালে, সব শাসক প্রার্থীর রোষানলে পড়ে অসংখ্য মিথ্যা মামলার মুখোমুখি হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও প্রায় ১৫২টি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন।  তাই রাজনীতি ও রাজনৈতিক কর্মীদের হেয় করে এমন কোন কর্মকাণ্ডে নির্বাচন কমিশনের সায় থাকা উচিত নয় বলে আমরা মনে করি।

এসআর/এসকেডি