‘আমি অসুস্থ, যদি ফিরি তারপর কথা বলব’
সদ্য প্রয়াত খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ
‘আমি ভালো নেই। অসুস্থ। কথা বলতে পারছি না। আমার কথা বলার শক্তি নেই। দোয়া করেন যেন শক্তি ফিরে পাই। তারপর কথা বলবো।’ ফোনের এক প্রান্ত থেকে অসহায়ের মতো কথাগুলো বলছিলেন আর্থিক খাতের দুর্নীতি ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার থাকা খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।
চলমান আর্থিক খাতের পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্তব্য নেওয়ার জন্য গত ২৭ জানুয়ারি (বুধবার) মোবাইলে ফোন কল দিয়েছিলাম (জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক- ঢাকা পোস্ট) ইব্রাহিম খালেদ স্যারকে। কিন্তু অসুস্থ্যতার কারণে তিনি মন্তব্য দিতে পারেননি। নমনীয় কণ্ঠে বলতে থাকেন- ‘আমি ভালো নেই। কথা বলতে পারছি না। আমার কথা বলার শক্তি নেই। দোয়া করেন যেন শক্তি ফিরে পাই। তারপর কথা বলবো।’
বিজ্ঞাপন
কিন্তু না-এরপর আর কথা হয়নি স্যারের সঙ্গে। চাওয়া হয়নি কোনো কমেন্ট। প্রায় এক মাস মহামারি করোনা ও বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন আর্থিক খাতের নির্মোহ বিশ্লেষক, সময়ের সাহসী কণ্ঠস্বর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।
ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বিভিন্ন প্রতিবেদন করতে যখনই কোনো মন্তব্য চাওয়া হতো তখনই খুবই সাবলীলভাবে কথা বলতেন। সুন্দর ও সহজ ভাষায় বিশ্লেষণ করতেন অর্থনীতির বিভিন্ন দিক। তবে অনিয়ম অব্যবস্থাপনা লুটপাতের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার, কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলতেন না।
বিজ্ঞাপন
আর্থিক খাতের রাঘববোয়ালদের রক্তচক্ষু পরোয়া না করে তিনি তাদের চোর-ডাকাত, লুটপাতকারী, মাফিয়া ইত্যাদি বলে অ্যাখ্যায়িত করতে থাকেন। দুর্নীতি বিরুদ্ধে তার কড়া কড়া মন্তব্য আর্থিক খাতের প্রতিবেদনগুলো পূর্ণতা পেত। অনেক সময় মন্তব্যের পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজের আইডিয়া দিতেন। কিন্তু আর কথা বলবেন না, নতুন নতুন নিউজের ধারণাও দেবেন না। কারণ তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি।
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকাকালীন বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে তাকে বিএসএমএমইউর হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।
ইব্রাহিম খালেদ জানুয়ারির শেষ দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন বলে জানা যায়। গুরুতর অসুস্থ হয়ে তিনি ওই সময় বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা নেন। সেখানে চিকিৎসার পর করোনা নেগেটিভ হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনার পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সবশেষ তিনি লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মানা যান।
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ দীর্ঘ ছয় দশক ধরে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যুক্ত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
ব্যাংকিং ও অর্থনীতি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে ২০০৯ সালে ‘খান বাহাদুর আহছানউল্লা স্বর্ণপদক’ ও ২০১৩ সালে ‘খান বাহাদুর নওয়াব আলী চৌধুরী’ জাতীয় পুরষ্কার দেওয়া হয়। খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ২০০০ সাল থেকে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার পরিচালক, নির্বাহী পরিষদের সভাপতি ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি ১৯৪১ সালে গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে স্নাতকোত্তর ও ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
এসআই/এসএম