পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী রাশেদ চৌধুরীকে খুব দ্রুত দেশে ফেরাতে পুনরায় দেশটির সহায়তা চাইলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী (সেক্রেটারি অব স্টেট) অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সহায়তা চেয়েছেন বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে দেশটির আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাসহ একটি আদর্শ গণতান্ত্রিক সরকার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র প্রমাণ দেবে বলে অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে অবহিত করেন মোমেন।

১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ৪৬ বছর পার হতে চলল। দীর্ঘ এই সময়ে বঙ্গবন্ধুর সব খুনিদের বিচার শেষ করা সম্ভব হয়নি। খুনিদের মধ্যে পলাতক পাঁচজনের একজন রাশেদ চৌধুরী, যিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু ফাঁসির আসামি বলে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দিতে অনীহা দেখিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। 

ট্রাম্প প্রশাসনের শেষের দিকে রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর ক্ষেত্রে আশার আলো দেখা দেয়। অর্থাৎ দীর্ঘ ১৫ বছর পর গত বছরের মাঝামাঝিতে ওয়াশিংটন রাশেদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিষয়টি সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনা করে।

এদিকে, ফাঁসির দণ্ড পাওয়া পাঁচ খুনির মধ্যে অন্তত একজনকে হলেও জন্মশতবার্ষিকীর বছরে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে বজায় রাখার জন্য নতুন মার্কিন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে মোমেন দেশটি আবার বৈশ্বিক নেতৃত্বে ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটি সফরে থাকলেও শারীরিকভাবে সাক্ষাৎ না করতে পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর ব্যাখ্যায় তিনি জানান, কোভিড ১৯ বিধিনিষেধের কারণে মোমেনের সঙ্গে শারীরিকভাবে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন আশা প্রকাশ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দ্রুত বাংলাদেশ সফর করবেন। একইসঙ্গে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন দেখতে আগামী মার্চে সুবর্ণজয়ন্তী ও জন্মশতবার্ষিকীতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরের অনুরোধ করেন।

ওয়াশিংটনে হওয়া এ টেলিফোন আলাপে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈশ্বিক ইস্যুতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করাসহ সহযোগিতা বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ঢাকা-ওয়াশিংটনের দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলাপে কোভিড ১৯ পরিস্থিতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মানবাধিকার, অভিবাসী ইস্যু ছাড়াও বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কিভাবে টেকসই সমাধানে আসা যায় সেসব বিষয়ে আলোচনা করেন।

এর আগে বুধবার এক টুইট বার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে আলাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী (সেক্রেটারি অব স্টেট) অ্যান্টনি ব্লিনকেন জানান, দক্ষিণ এশিয়ায় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ অর্থনৈতিক সৃমদ্ধির পথ হিসেবে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিকে (আইপিএস) বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চায় দেশটি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে অ্যান্টনি ব্লিনকেনের বৈঠক প্রসঙ্গে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস জানান, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী অর্থনীতি, সন্ত্রাসবাদ এবং প্রতিরক্ষা খাতে দুই দেশের সহযোগিতা আরও গভীরভাবে কীভাবে কাজ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। একইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে ওয়াশিংটন-ঢাকার সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র জানান, আলোচনায় রোহিঙ্গাদের স্থায়ী সমাধানসহ অভিবাসী এবং মানবাধিকারের ওপর গুরত্বারোপ করা হয়েছে। তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। সোমবার রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।

এনআই/আরএইচ