টেকসই উন্নয়ন নিয়ে সেইস্টের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো তাদের লক্ষ্য অর্জনের পথে ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা ও তরুণদের মধ্যে এ ব্যাপারে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশে সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউট ফর সোশাল ট্রান্সফরমেশন (সেইস্ট) আগামী ১৩ আগস্ট আয়োজন করতে যাচ্ছে তাদের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে এটি অনুষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. জিয়া রহমান এবং সাজিদা ফাউন্ডেশনের সিইও জাহিদা ফিজা কবির। দিনব্যাপী এ আয়োজনে একত্রিত হবেন দেশি-বিদেশি বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক ও নীতিনির্ধারক। থাকছে টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা, প্রবন্ধ উপস্থাপনসহ নানা আয়োজন। সম্মেলনে ৪টি মৌলিক আলোচ্য বিষয় রয়েছে।
সকলের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত মানসম্পন্ন শিক্ষা
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ের আলোচনার মধ্যে থাকবে নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন, হাই স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর সাইবার আগ্রাসনের প্রভাব, দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে সাম্প্রতিক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন, মানসম্পন্ন শিক্ষার প্রবেশাধিকারকে গঠনকারী সাংস্কৃতিক ও সামাজিক-রাজনৈতিক সূচক ইত্যাদি।
‘একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষার পুনর্নির্মাণ’ শীর্ষক প্রধান বক্তৃতা দেবেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক অধ্যাপক একিউএম শফিউল আজম। দেশের শিক্ষা খাতের সমসাময়িক সমস্যা ও তার সম্ভাব্য সমাধান তিনি তুলে ধরবেন।
বিজ্ঞাপন
সকলের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবন ও সুস্থতা
প্রতিটি মানুষের জন্যই প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং আধুনিক, দক্ষ স্বাস্থ্যসেবা। এসডিজির এই লক্ষ্যমাত্রাটি অর্জনের পথে বেশ কয়েকটি দেশ ফিনিশ লাইনের কাছাকাছি থাকলেও মহামারি সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা অগ্রগতি স্থবির হয়ে পড়ে। সম্মেলনের এই দ্বিতীয় থিমের আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ, স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলিতে লিঙ্গ এবং অসমতা এবং করোনা মহামারি চলাকালীন বাংলাদেশি যুবকদের স্বাস্থ্য আচরণের পরিবর্তন, প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার বহু-অসুস্থতার বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক ব্যাপকতা প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত।
সম্মেলনে স্বাস্থ্য বিষয়ে গণবক্তৃতা দেবেন ব্র্যাকের সাবেক ভাইস চেয়ারপার্সন অধ্যাপক এ. মোশতাক চৌধুরী ‘বাংলাদেশ অ্যাট ৫০ : পপুলেশন হেলথ অ্যান্ড ফিউচার আউটলুক’ বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন। বর্তমানে তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। বর্তমান স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে অধ্যাপক মোশতাক চৌধুরী সেগুলো সমাধানের চাবিকাঠির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন।
টেকসই পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই
সম্মেলনে অভিযোজন এবং প্রশমন কৌশল, টেকসই আবাসন, মরুভূমির সবুজায়ন, নারীদের জীবিকার উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রতি জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি এবং অনুশীলন, ভূপৃষ্ঠের পানির গুণমান মূল্যায়ন, অভিযোজিত সবুজ আবাসিক ভবন এবং পরিবেশ-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হবে। এ বিষয়ে প্রধান বক্তব্য রাখবেন ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টসের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিয়া সেলিম। তিনি সেন্টার ফর সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট, ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টসের পরিচালক হিসেবে কর্মরত। এছাড়াও তিনি দায়িত্ব পালন করছেন সাজিদা ফাউন্ডেশনের জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা
শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ – এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খাতের জন্য নির্ধারিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ অর্জনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি অনেক পিছিয়ে পড়েছে। সুতরাং, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পৌঁছানোর উদ্দেশে এই তিনটি খাতের ওপরে বিশেষভাবে আলোকপাত করা দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর জন্য অপরিহার্য। সম্মেলনের এই আলোচ্য বিষয়টির মধ্যে স্থানান্তর এবং কর্মসংস্থানের ক্ষতি, মাটি ব্যবস্থাপনা এবং ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য টেকসই পদ্ধতি, বাংলাদেশে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাধা এবং আরও নানা প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
সেইস্টের সম্মেলন বিশেষভাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ খাতের সমস্যাগুলোকে তুলে ধরবে এবং এই মূল ক্ষেত্রগুলোতে টেকসই উন্নয়নের প্রচারের মাধ্যমে তাদের সমাধানগুলো কী হতে পারে তা নিয়েও আলোচনা করা হবে।
পর্যালোচকদের দ্বারা নির্বাচিত পেপারগুলো সাউথ এশিয়ান জার্নাল অফ সোশ্যাল সায়েন্সেস (ইন্টারন্যাশনাল সোসিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাথে সংশ্লিষ্ট) এবং সাউথ এশিয়ান জার্নাল অফ এপিডেমিওলজি অ্যান্ড পাবলিক হেলথে প্রকাশিত হবে। বিশেষজ্ঞ পর্যালোচকদের দ্বারা নির্বাচিত নিবন্ধের লেখক/উপস্থাপকদের ১০ হাজার, ৫ হাজার ও ৩ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। এছাড়াও থাকছে সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য আংশিক বা পূর্ণ বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ।
সেইস্ট দ্বারা আয়োজিত এ সম্মেলনের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করছে আইডিআরসি কানাডা, কাঠমুন্ডু বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউশিকাগো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ এবং স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারস লিমিটেড।
উল্লেখ্য, সেইস্ট ফাউন্ডেশন দ্বারা পরিচালিত সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট ফর সোশ্যাল ট্রান্সফরমেশন (সেইস্ট), ঢাকায় অবস্থিত একটি অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসাবে স্বীকৃত এ প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সমস্যা এবং সম্ভাবনা বিশ্লেষণের জন্য জ্ঞানের কেন্দ্র তৈরি করে।
‘এনভিশনিং আওয়ার কমন ফিউচার’ শীর্ষক সেইস্ট-এর প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৬ সালে। এরই ধারাবাহিকতায় এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে মহামারি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সেইস্ট আয়োজন করতে যাচ্ছে এ বছরের আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
সম্মেলনে যোগদানের জন্য রেজিস্ট্রেশন করুন - https://bit.ly/3P9ANzR