আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় ঢাকাকে পাশে চায় টোকিও
আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মাতারবাড়িকে কেন্দ্র করে উত্তর-পূর্ব ভারত ও মিয়ানমারসহ বাংলাদেশকে নিয়ে কৌশলগত অংশীদারিত্ব পরিকল্পনা করছে জাপান। টোকিও’র এই পরিকল্পনায় শরিক হতে চায় ঢাকা।
বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিরোশি সুজুকির সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
বিজ্ঞাপন
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘জাপান মাতারবাড়িকে কেন্দ্র করে পুরো আঞ্চলিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কীভাবে আরও গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, সেভাবেই তারা এগোচ্ছে। আগামীতে যেন আরও নতুন নতুন প্রকল্প বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামে তাদের যথেষ্ঠ আগ্রহ রয়েছে; তার মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারত আছে, মিয়ানমার আছে। সব মিলিয়ে এটা তাদের একটা বড় পরিকল্পনার অংশ। আমরাও এর সঙ্গে শরিক হতে চাই বা আমরা এরইমধ্যে হয়েছি।’
কোভিড-১৯ এর কারণে ঢাকা-টোকিও’র মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের তৃতীয় বৈঠকটি ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হলো। প্রায় আড়াই ঘণ্টা এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞাপন
বৈঠকে মাতারবাড়ি ছাড়াও দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যু, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, রোহিঙ্গা ইস্যু, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন পরিকল্পনা, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জন্মশতবার্ষিকী, আঞ্চলিক ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় স্থান পায়।
টোকিও’র পক্ষ থেকে ঢাকাকে ইন্দো-প্যাসিফিকে চাওয়া হচ্ছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘প্রায় আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আমরা সভা করেছি। সেখানে আমরা দুই দেশের বিভিন্ন সম্পর্কের যে বিষয় আছে সেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি। আমাদের আঞ্চলিক ইস্যুগুলো আলোচনায় উঠে এসেছে। ওরা ইন্দো প্যাসিফিক নিয়ে আলোচনা করেছে, সেখানে আমাদের সংযুক্ত করতে চায় তারা। আমরা বিষয়টা আলোচনা করে দেখব।’
আগামী বছর ঢাকা-টোকিও’র সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায় রচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করব, ২০২২ সালে এই দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায় রচিত হবে। সেটি কৌশলগত সম্পর্কের উন্নতি হবে। আর আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অন্যান্য যে সম্পর্কগুলো আছে, ওদের যে বড় পরিকল্পনা রয়েছে সবগুলোর।’
বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সবিচ। তিনি বলেন, ‘আমরা শেয়ার করেছি, সর্বশেষ মিয়ারমানের ক্যু’র পরে কীভাবে পজিশনিং করতে হচ্ছে আমাদেরকে। আমাদের যে রেসপন্স সেটা তাদের ব্যাখ্যা করেছি। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রত্যাবাসন, সেটাকে তারা সম্মান করে এবং প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে তাদের সাহায্য চেয়েছি।’
জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকেই জাপানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক। পরে ১৯৭৩ সালে জাতির জনকের টোকিও সফরের মধ্য দিয়ে সে সম্পর্ক সুদৃঢ় ভিত্তি পায়। এরপর থেকে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। সবশেষ ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের পর জাপানের তখনকার প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখন সেই সম্পর্ককে আমরা সমন্বিত সম্পর্ক হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলাম।’
এ সময় পররাষ্ট্র সচিব জানান, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, জন্মশতবার্ষিকী এবং আগামী বছর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাপানকে সঙ্গে নিয়ে অনেক অনুষ্ঠান আয়োজনের পাশাপাশি এরইমধ্যে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীরা যাতে সফর করতে পারেন সেই বিষয়টিও রাখা হবে।
এনআই/জেডএস