নাতির জন্য হাসপাতালের মেঝেতে বসে অপেক্ষা করছেন দাদি-নানি/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

দাদি-নানিদের কলিজার টুকরো হিসেবে থাকেন নাতি-নাতনিরা, এটি ধ্রুব সত্য। কলিজার এ টুকরোদের অসুস্থতায় কেঁদে ওঠে তাদের মন। ভালোবাসার এমনই দৃশ্যের দেখা মিলেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। অসুস্থ নাতি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে (ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্ট) চিকিৎসাধীন। আর মেঝেতে অসহায়ের মতো বসে আছেন দাদি-নানি।

বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের মেঝেতে মন খারাপ করে বসে আছেন সাভারের হেমায়েতপুর থেকে আসা চিকিৎসাধীন শিশুর দাদি-নানি। দাদির নাম হোসনে আরা বেগম, নানি শেলি বেগম।

হোসনে আরা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার নাতিটা ভেতরে (জরুরি বিভাগে)। আল্লাহ জানে কেমন আছে?’ নাতির নাম আজান বলেও জানান তিনি।

পাশে থাকা নানি শেলি বেগম বলেন, ‘আজানের বয়স মাত্র ১০ মাস। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। ডাক্তাররা বললেন, নিউমোনিয়া হয়েছে। অবস্থা খারাপ হওয়াতে এখানে আনা হয়েছে।’

শিশু আজানের বাবা রাসেল ও দাদি-নানি/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

দাদি আর নানির সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে সেখানে হাজির হন আজানের বাবা মো. রাসেল। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার ছেলের ঠান্ডা থেকে নিউমোনিয়া হয়েছে। এক ঘণ্টা আগে এখানে নিয়ে এসেছি। এখন মোটামুটি ভালো আছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ২০৭ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে। সেখানে আমার ছেলের সঙ্গে বড় বোন আর স্ত্রী আছে। ডাক্তাররা দুটা পরীক্ষা দিয়েছে, এখন এগুলো করাতে হবে।’

ভারাক্রান্ত মন নিয়ে শিশুটির বাবা আরও বলেন, ‘এর আগে আমার একটি ছেলে মারা গেছে। এখন আজানই একমাত্র সন্তান। তার কিছু হয়ে গেলে আমরা কীভাবে থাকব?’

এমন প্রশ্ন শুধু রাসেলের একার নয়, জরুরি বিভাগে প্রতিদিনই এমন প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন স্বজনরা। আপনজনের জন্য কাঁদে তাদের মন, চোখে ঝরে অশ্রু। সুস্থতা কামনায় করেন প্রার্থনা।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত আলমগীর হোসেনকে আনা হয়েছে জরুরি বিভাগে। সঙ্গে থাকা বন্ধু লিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন,

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত আলমগীর হোসেনকে আনা হয় ঢামেক হাসপাতালে/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

 ‘রাস্তা পারাপারের সময় বাইক ধাক্কা দিয়েছে। পা ভেঙে গেছে। আমরা এখানে বন্ধুরা মিলে নিয়ে এসেছি। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন ইমন নামের আরেক যুবক। মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে। শরীরে এখনও লেগে আছে রক্তের ছাপ। ভাতিজা মো. রাসেদসহ কয়েকজন তাকে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। এরপর ঢোকানো হয় জরুরি বিভাগে।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ইমনকে চিকিৎসার জন্য আনা হয় ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

বাইরে অপেক্ষমাণ রাসেদ বলেন, ‘আমার চাচাকে ভেতরে নেওয়া হয়েছে। কী হয় তা এখনও বলতে পারছি না। সবাই আল্লাহকে ডাকছি।’

ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে হাহাকারের এমন চিত্র নতুন নয়। প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় আহতদের আনা হয় এখানে। স্বজনরা জরুরি বিভাগের সামনে অশ্রুসিক্ত নয়নে অপেক্ষা করেন ভালো খবরের আশায়। কেউ শোনেন, কেউ শোনেন না।

এসএইচআর/এফআর