তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেছেন, আমাদের ইনফরমেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচারের মধ্যে তিনটি বিষয় ক্রিটিকাল। এর মধ্যে একটা হচ্ছে ন্যাশনাল পাওয়ার গ্রিড, টেলিকমিউনিকেশন এবং ফাইনান্সিয়াল সেক্টর। এই তিন জায়গাতে আক্রমণ বেশি হয়। কভিড পরবর্তীতে এই অপরাধী চক্র সাইবার জগতে সক্রিয়। চলতি মাসে প্রায় ৫ লাখ সাইবার হামলা হয়েছে।

সোমবার (২২ আগস্ট) আগারগাঁওয়ের আইসিটি ভবনের বিসিসি অডিটোরিয়ামে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ আয়োজিত ‌‘বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে জাতীয় পর্যায়ে সাইবার হুমকি ও ঝুঁকি’ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

পলক বলেন, করোনার সময়ে সারা বিশ্বে সাইবার আক্রমণ বেড়েছিল। সামনে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো চক্র অপতৎপরতা চালাতে পারে। এর পেছনে কে আছে তা আমরা জানিনা। আপাতত যে সাইবার আক্রমণগুলো আসার আশঙ্কা আছে, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করছি। 

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র প্রমুখ।

আপনারা জানেন বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি ম্যালওয়ার সিস্টেমে এক মাস ধরে ছিল। সময় সুযোগ বুঝে সে ম্যালওয়ারের মাধ্যমে তারা অর্থটা চুরি করে নিয়ে গেছে। আমি যেটা জেনেছি বিদ্যুৎ সেক্টরে সারা বছরই বিশ্বে হামলাটা হয়। স্টেট স্পন্সর হ্যাকার বেছে নেন, সরকারের কার্যক্রমকে কীভাবে বিঘ্নিত করা যায়। তারা যদি পাওয়ার এবং ইন্টারনেট এই দুটো জায়গায় হামলা করতে পারে তাহলে সরকারের কাজ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবকিছুই কিন্তু ভেঙে পড়ে। যখন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কোনো সাইবার হামলা হয়, আমরা অতীতেও দেখেছি দুটো সেক্টরে মারাত্মক হামলা হয়। তার একটি হচ্ছে বিদ্যুৎ, অন্যটি হচ্ছে টেলকো। এর বাইরে আরেকটি হচ্ছে আর্থিক। অর্থটা চুরি করতে পারলে তার আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হয়।

তিনি বলেন, আমরা বারবারই বলি যে ৫ লাখ, ১০ লাখ, ২০ লাখ অ্যাটাক হচ্ছে। এগুলো তো মানুষ বসে করে না। এগুলো একটা করে ম্যালওয়ার তৈরি করছে, যে ম্যালওয়ার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বারবার হিট করছে। এই কারণেই নাম্বারটা অনেক বেশি। কোনো মাসে ৫ লাখ, কোনো মাসে ১০ লাখ। আমাদের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাটাকের প্রধান উদ্দেশ্যই কিন্তু আমাদের সাইবার জগতকে নিরাপদ রাখা। সেখানে এই ধরনের সাইবার অপরাধ করলে তার কি শাস্তি হবে, সেটা আছে। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ অ্যাটাকগুলো বিদেশ থেকে আসছে। আর দেশে ছোট ছোট গ্রুপ হিসেবে যারা কাজ করছে, তাদের ধরে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তাদের বিচারও হচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, যখন কোনো সাইবার ক্রিমিনাল দেশের বাইরে থেকে আক্রমণ করে, সেখানে আমাদের সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার। উন্নত বিশ্বে আপনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। কিন্তু যেগুলো ক্ষতি করে, সেগুলো আপনারা অ্যাভয়েড করতে পারবেন। সচেতনতা তৈরি করার সুযোগটা আমাদের গ্রহণ করতে হবে। আর এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে সমঝোতা চুক্তি স্মারক করা। কোনো একটা দেশের পক্ষে একা পুরো বিশ্ব সাইবার নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব না এবং নিজের দেশকেও সাইবার নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। যদি এটা আন্তর্জাতিকভাবে একত্রিত হয়ে কাজ না করে।

তিনি বলেন, স্মার্টফোনে নিরাপত্তার জন্য বেশকিছু অ্যাপ্লিকেশন আছে যেগুলো প্রাইভেট কোম্পানির। এগুলো ব্যক্তিগত পর্যায়ে চেক করে ডাউনলোড করতে হবে। এর জন্য আমরা কোনো ধরনের টুল সরবরাহ করি না। এ বিষয়ে আমাদের কোনো উদ্যোগও নেই। তবে একটা বিষয় খেয়াল করতে হবে, আমরা যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করছি- ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে দুটো গ্রুপ আছে, যারা অলরেডি হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে এবং যারা হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে কিন্তু তারা নিজেরাও জানে না। আমরা যারাই ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হব, তারাই সাইবার ঝুঁকির মধ্যে আছে। 

এমএইচএন/এমএ