ঢাকা ও টোকিও’র কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার পরিকল্পনা করছে। আর এটি খুব শিগগিরই হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৩ সালে জাপান সফর নিয়ে ‘স্বাগত বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধামন্ত্রীর জাপান সফরের পরিকল্পনার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী জাপান সফর করেন। সেই সফরে আমি ছিলাম। তার কয়েক মাসের মাথায় শিনজো আবে (প্রয়াত জাপানের প্রধানমন্ত্রী) বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। ২০১৯ সালে জাপান যান প্রধানমন্ত্রী, সেই সফরেও সফরসঙ্গী ছিলাম। বাংলাদেশ-জাপানের ৫০ বছরে এসে দাঁড়িয়ে আমরা পরিকল্পনা করছি, প্রধানমন্ত্রী বা ভিভিআইপি লেভেলের আরেকটি সফর করার। এটা খুব শিগগিরই।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-জাপান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ঢাকার জাপান দূতাবাস কর্তৃক জাপান সরকারের তৈরি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসন রওশন আরা মান্নান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসন ওয়াসেকা আয়েশা খান উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন: পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য সঠিকভাবে প্রকাশিত হয়নি : মন্ত্রণালয়

প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ গঠনে জাপানের অবদানের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, জাপান সরকার কতটা নিঃস্বার্থভাবে, জাপানের রাজনীতিবিদেরা মুক্তিযুদ্ধের আগে, মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতা অদ্যাবধি চলছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যে অনুকরণীয় সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরের কথা স্মরণ করেন। তিনি দু’দেশের সম্পর্কের বিস্তৃত অংশীদারিত্বে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

ড. মোমেন জাপান সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন।

স্বাগত বক্তব্যে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়েও জাপান বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছে। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরের পর একটি সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে জাপান বাংলাদেশের অংশীদার হয়েছে।

জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের পাশে ছিল জাপান। সামনের দিনেও উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে জাপান বাংলাদেশের পাশে থাকবে। এমআরটি ৬ (মেট্রোরেল প্রকল্পের একটি লাইন) আগামী ডিসেম্বরে চালু হবে। আড়াই হাজারে অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) ছাড়াও বাংলাদেশের একাধিক খাতে জাপান বিনিয়োগ করছে।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধান জটিল অবস্থায় চলে গেছে— উল্লেখ করে ইতো নাওকি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। কিন্তু এর সমাধান জরুরি। আর এ সমস্যা সমাধানে জাপান বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

ইন্দো প্যাসিফিক প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক রূপকল্প বাস্তবায়নে জাপান বাংলাদেশকে অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে। জাপান ভারত প্রশান্ত মহাসাগরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। এখানে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও জলবায়ু ইস্যুতে জোর দেওয়া হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরের ৫০টি স্মরণীয় ছবি সম্বলিত একটি ফটো অ্যালবাম পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্রসচিব, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসন রওশন আরা মান্নান ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসন ওয়াসেকা আয়েশা খানের কাছে হস্তান্তর করেন।

এনআই/এসএসএইচ