শ্রমিকদের অর্থ আত্মসাৎ হয়নি, অভিযোগ ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে
শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ হয়নি। অভিযোগ ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিজ্ঞাপন
দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দুপুর সোয়া ১টা থেকে পৌনে তিনটা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
নাজমুল ইসলাম বলেন, এখানে কোনো আত্মসাৎ হয়নি। শ্রমিক ইউনিয়নের হিসাবে টাকাটা গিয়েছে। ৪৩৭ কোটি তারা দাবি করেছিল, সে টাকা তাদের দেওয়া হয়েছে। এসব ব্যাখ্যা দুদককে দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের চাহিদামতো কাগজপত্র দিয়েছি, তারা তা দেখুক।
বিজ্ঞাপন
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা এক ধরনের ভুল বোঝাবুঝি বলতে পারেন। এটি তারা (দুদক) খতিয়ে দেখবে। শ্রমিক ইউনিয়ন যখন শ্রম মন্ত্রণালয়ে অভিযোগগুলো করেছিল, তখন থেকেই ইউনিয়নের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তারা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে অভিযোগ করেছিল। আমরা সেখানে কাগজপত্র দিই। আজ দুদককেও কাগজপত্র দিয়েছি, তারা মিলিয়ে দেখবে। আমরা মনে করি, আমাদের বিষয়গুলো ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের কোনো দায়ভার আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমুল ইসলাম বলেন, আমি ১৯৯৭ সাল থেকে এমডি হিসাবে কর্মরত আছি। ড. মুহাম্মদ ইউনুস প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্যারের সঙ্গে আমার মিটিংয়ে দেখা হয়। এটা একটি নন-প্রফিটেবল প্রতিষ্ঠান। আইনগতভাবে যতটুকু দায়ভার পড়ে, ততটুকু।
এ ছাড়া আজ আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী ও আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গত ২২ আগস্ট তাদের তলব করে চিঠি দেয় দুদক। এর আগে গত ১৬ আগস্ট অভিযোগ সংক্রান্ত ১১ ধরনের নথিপত্র দুদকে আসে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি অনুসন্ধানে নথিপত্র চাওয়া হয় ১ আগস্ট।
অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের টিম গঠন করে দুদক। টিমে দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। টিমের অপর সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তার ও নূরে আলম সিদ্দিকী।
গত ২৮ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করার কথা জানান সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে দুদক সচিব বলেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ সংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠিয়েছেন। ওই প্রতিবেদন কমিশন পর্যালোচনা করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অভিযোগগুলো হলো- অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ লোপাট, শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধকালে অবৈধভাবে অ্যাডভোকেট ফি ও অন্যান্য ফির নামে ৬ শতাংশ অর্থ কর্তন, শ্রমিক কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দ করা সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ ও কোম্পানি থেকে ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানিলন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ।
পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন কি না- সে সময় এমন প্রশ্নের জবাবে মো. মাহবুব হোসেন বলেন, অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ হওয়ার পর আপনারাই জানতে পারবেন এর সঙ্গে কে কে সম্পৃক্ত।
আরএম/আরএইচ