বন্দী হাতির ওপর নির্যাতন এবং হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানিয়েছে প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন (প ফাউন্ডেশন)।

শুক্রবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে সংবাদ মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিলের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, এশিয়ান হাতি বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজার্ভেশন অব ন্যাচারের লাল তালিকাভুক্ত মহাবিপন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত। বাংলাদেশ এশিয়ান হাতির আদি নিবাস ও বিচরণের জন্য একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল। এদেশে প্রধানত তিনটি ক্যাটাগরিতে এশিয়ান হাতি রয়েছে। যেমন- পরিযায়ী হাতি, বাংলাদেশের বনাঞ্চলে বসবাসকারী হাতি এবং বন্দী হাতি।

বহু বছর ধরেই দেশের মানুষ পথেঘাটে একটি দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত, বিশালাকায় একটি হাতির পিঠে মাহুত বসে থাকে। এবং হাতিটি দোকানে দোকানে ঘুরে চাঁদা তুলতে থাকে। মাহুতের হাতে একটি অদ্ভুত দর্শন লাঠি দেখা যায়। যার মাথায় সুক্ষ্ম একটি ধাতব হুক লাগানো থাকে। হাতিটিকে যন্ত্রণা দিয়ে কথা শুনতে বাধ্য করানোর কাজে এই হুক ব্যবহার হয়। বর্তমানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার মাঠঘাট, বাজারে এই দৃশ্য নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাতির পিঠে বসে থাকা কিশোর বয়েসি মাহুতটি বেপরোয়া হয়ে ধাতব হুকটি দিয়ে সজোরে আঘাত করতে থাকে হাতিটিকে দোকানে দোকানে হেঁটে চাঁদা তুলবার জন্য। বহুদিন ধরে প্রশাসনের বিনা বাধা ও বিনা প্রশ্নে এই অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ফলে তাদের সাহস কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই মাহুতদের কথাবার্তার ধরন ও হাতির প্রতি আচরণ দেখলে সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে। চাঁদার টাকার লক্ষ্যমাত্রা পূরণের অস্থিরতা থেকে প্রয়োজনে এরা নির্মম হয়ে ওঠে হাতিটির ওপর।

আরও বলা হয়, হাতিটি যখন প্রচণ্ড রোদে শহরের পিচ ঢালা রাস্তায় মাইলের পর মাইল হেঁটে বেড়ায়, তখন তার জন্য নির্দিষ্ট খাবার ও যোগাড় করতে দেখা যায় না। ফলে ক্ষুধার তাড়নায় হাতিকে রাস্তায় পরে থাকা আবর্জনা এমনকি প্লাস্টিকের ব্যাগও খেতে দেখা যায়। পুরো বিষয়টিই প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটছে। গত ২০১৯ সালের ৩ মে, র‌্যাবের একজন ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে আটক করে দুটি হাতি চিড়িয়াখানায় পাঠান। কারাদণ্ড দেয়া হয় মাহুতদের। সে বছরই জুলাই মাসে বাংলাদেশে পাস হয় ‘প্রাণিকল্যাণ আইন, ২০১৯’। যেখানে উল্লেখ করা হয়, কোন প্রাণীকে ধাতব কিছু দিয়ে আঘাত করাও প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা হিসেবে গণ্য হবে। যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এরপর প্রায় তিন বছর পার হলেও অন্যান্য বন্দী হাতির ওপর নির্যাতন ও চাঁদাবাজি বন্ধে বন বিভাগকে উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি।

মূলত বন বিভাগই ‘হরিণ ও হাতি লালনপালন বিধিমালা, ২০১৭’ এর অধীনে শর্ত সাপেক্ষে বিভিন্ন ব্যক্তিকে হাতি লালন পালনের সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে। যেখানে উল্লেখ থাকে যে, হাতিটিকে দিয়ে চাঁদাবাজি করা যাবে না। মূল দখলদার একই হাতিকে তৃতীয়পক্ষের কাছে বাৎসরিক চুক্তিতে ভাড়া দিয়ে থাকে। এতসব অনিয়মের ফলে হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি এবং হাতির ওপর অমানুষিক নির্যাতন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বন্যহাতি রক্ষায় সরকার এবং পরিবেশবাদীরা সরব হলেও এদেশের বন্দী হাতির ওপর অমানবিক নির্যাতন ও আইন পরিপন্থী ব্যবহার বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপরন্তু আটক থাকা অবস্থায় মাদী হাতি সন্তান জন্ম দিলে সেই হাতি শাবককেও অকথ্য নির্যাতনের মধ্য দিয়ে মানুষের দাসত্ব স্বীকার করে নিতে হয়। বিক্রি হয়ে যেতে হয় কোন সার্কাস দল বা গাছের গুড়ি সরানোর কাজে। এক কথায় বাংলাদেশের বন্দী হাতিরা বংশ পরম্পরায় দাস হয়েই বেঁচে আছে।

বন্দী হাতির ওপর নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, বন্দী হাতির ওপর নির্যাতন রোধ করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে একযোগে পদক্ষেপ নিতে। পথেঘাটে চাঁদাবাজি ও হাতির উপর নিষ্ঠুর আচরণ বন্ধে তাৎক্ষণিক আইনি পদক্ষেপ নিতে পুলিশকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তার অধীনে থাকা শহর ও গ্রামগুলোর স্থানীয় কর্মকর্তাদের সতর্ক করতে পারে। বন্দী হাতি দখলে রাখা ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। বন অধিদপ্তর এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে হাতির প্রতি অত্যাচার বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এমএইচএন/এমএ