করোনা বর্জ্য অপসারণের দাবি
করোনা বর্জ্য অপসারণে নাগরিক সংলাপ
করোনার সময়কার বর্জ্য অপসারণের দাবি তুলেছেন পরিবেশ আন্দোলন কর্মীরা। তারা বলছেন, কোভিড বর্জ্য আলাদা বিনে না ফেলে, সাধারণ বিনে ফেলা হচ্ছে। এ থেকে জাতি আরও বড় হুমকির মুখে পড়ছে এবং পরিবেশ প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক নাগরিক সংলাপে তারা এসব কথা বলেন।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), কোয়ালিশন ফর দ্যা আরবান পুওর (কাপ) এবং বারসিক নামক সংগঠন নাগরিক সংলাপটির আয়োজন করে । এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বারসিকের নগর গবেষক মো. জাহাঙ্গীর আলম। বারসিকের ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বলের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান।
বিজ্ঞাপন
বক্তারা বলেন, করোনা মহামারিতে বর্জ্য উৎপাদন অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব বর্জ্য দিয়ে রাস্তা-ঘাটে সয়লাব হয়ে গিয়েছে। কোভিড বর্জ্য আলাদা আলাদা বিনে না ফেলে, সাধারণ বিনে ফেলা হচ্ছে। এ থেকে জাতি আরও বড় হুমকির মুখে পড়ছে। এ বিষয়ে নাগরিকদের সচেতন হতে হবে।
তারা বলেন, অনেকেই করোনার সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের পর রাস্তাঘাটে ফেলে দিচ্ছেন। এগুলো বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে চলে যাচ্ছে ড্রেনে। ড্রেন থেকে নদী ও সাগরের তলদেশে গিয়ে নষ্ট করছে জীব বৈচিত্র্য ও পরিবেশ। রাজধানীর বিভিন্ন গাছে, শহরের অলি-গলিতে ও ড্রেনে মাস্ক দেখা যাচ্ছে। হাতের গ্লাভসও যেখানে সেখানে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাড়ছে দূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি। মূলত সাধারণ মানুষের অসচেতনতার কারণে এমনটি ঘটছে।
বিজ্ঞাপন
নাগরিক এ সংলাপে জানানো হয়, রাজধানীর দুই সিটিতে প্রতিদিন প্রায় ৮০০০ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়। করোনাকালে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিপুল পরিমাণ পরিত্যক্ত সুরক্ষা সামগ্রী। ব্র্যাকের এক গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত চিকিৎসা বর্জ্যের মাত্র ৬ দশমিক ৬ ভাগের সঠিক ব্যবস্থাপনা হয়। বাকি ৯৩ ভাগই ব্যবস্থাপনাহীন। সারা দেশে চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ২৪৮ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মাত্র ৩৫ টন (১৪ দশমিক ১ ভাগ) সঠিক নিয়মে ব্যবস্থাপনার আওতায় রয়েছে। এর অধিকাংশই আবার রাজধানীতে সীমাবদ্ধ।
করোনা বর্জ্য অপসারণে সংলাপ থেকে ৫টি দাবি তুলে ধরা হয়
- মানুষ যাতে করোনা সুরক্ষা সামগ্রী যত্রতত্র না ফেলে রাখে তার জন্য সরকারিভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
- প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি মাস্ক, গ্লাভস ব্যবহার বন্ধ করে কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার বাড়ানোর জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।
- বর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহন, ডাম্পিং এর সঙ্গে যুক্ত পেশাজীবীদের পর্যাপ্ত জীবন সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে।
- কেন্দ্রীয়ভাবে মেডিকেল বর্জ্য ম্যানেজমেন্টের জন্য একটি সেন্ট্রাল ফ্যাসিলিটি তৈরি করা এবং এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, তদারকি, পরীক্ষণ ও তথ্য প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
- সবার জন্য বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলার জন্য জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য পরিকল্পিত উপায়ে বর্জ্যকে ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
নাগরিক সংলাপে অংশ নেন, কাপের নির্বাহী পরিচালক রেবেকা সান-ইয়াট, প্রকৌশলী আবদুস সোবহান, কুমুদিনী হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, পরিবেশবিদ আবুল হাসনাত, বারসিকের পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
একে/আরএইচ