নাগরিক টিভির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ
গুলিস্তানে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ভবন নিয়ে নাগরিক টেলিভিশন ‘একপেশে’ সংবাদ পরিবেশন করেছে— এমন অভিযোগ এনে বেসরকারি টিভি চ্যানেলটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। কমিটির সভাপতি শাজাহান খানের সভাপতিত্বে মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, এ বি তাজুল ইসলাম, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল ও মোছলেম উদ্দিন আহমদ বৈঠকে অংশ নেন।
বিজ্ঞাপন
নাগরিক টিভির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেন, গুলিস্তানে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ভবন নিয়ে অতীতে অনেক অনিয়ম ছিল। কিন্তু আমি কমিটির সভাপতি হওয়ার পর ঘটনা তদন্ত করে নিয়মের মধ্যে নিয়ে এসেছি। নাগরিক টিভি ওই ভবন নিয়ে প্রতিবেদন করেছে। কিন্তু তারা প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়, কল্যাণ ট্রাস্ট বা সংসদীয় কমিটি কারোরই বক্তব্য নেয়নি।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় তাদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেছে। আমি নিজেও ফোন দিয়ে আমাদের বক্তব্য শুনতে বলেছি। কিন্তু তারা সেটা করেনি। এজন্য কমিটি বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ করেছে। বৈঠকে কমিটি নাগরিক টিভির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেছে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারসহ নামফলক মুছে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে সংসদীয় কমিটি। সংসদ সচিবালয় ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, লালমনিরহাট জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাধি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই কবর ভেঙে পড়া ও নামফলক মুছে যাওয়ার ছবি কমিটির নজরে আসে। পরে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি শাজাহান খান নিজেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তিনি বৈঠকে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবিতকালে নানাভাবে অবহেলিত হয়েছেন। মৃত্যুর পরও তাদের অবহেলা করা হচ্ছে। এটি হতে দেওয়া যায় না। আমরা হতে দিতে পারি না।
পরে লালমনিরহাটের ওই ঘটনা তদন্তের পাশাপাশি দেশের অন্য কোথাও এ ধরনের ঘটনা রয়েছে কি না, তা তদন্ত করার সুপারিশ আসে বৈঠক থেকে।
এ বিষয়ে শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের কবর বাঁধাই করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেখানে নিম্নমানের ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্মাণের কিছুদিনের মধ্যে নামফলক মুছে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও বাঁধাই করার পরও কবর ভেঙে পড়ছে। আমরা বলেছি এটা চলবে না। উন্নতমানের ম্যাটেরিয়াল ও নামফলকে অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। আমরা এসব কবর সরেজমিনে দেখে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। ঘটনার তদন্ত করতে বলেছি।
বৈঠকে বিজ্ঞ আইনবিদদের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে জমি বা সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলাগুলো পরিচালনার জন্য কমিটি সুপারিশ করে। তা ছাড়া, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের গুলিস্তান কমপ্লেক্স ভবনে অবৈধভাবে দখলকৃত দোকান, চিলেকোঠা, সিঁড়ি এবং নবম তলায় দাহ্য পদার্থের দোকান দ্রুততম সময়ের মধ্যে খালি করার জন্য সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের গচ্ছিত অর্থে তেজগাঁওয়ের জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুপারিশ আসে বৈঠক থেকে।
বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. সিরাজুল ইসলামের দুর্নীতি সংক্রান্ত সব তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার যাবতীয় পেনশন ও অন্যান্য সুবিধাদি বন্ধ রাখার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।
এসআর/আরএইচ