আফসীন আহমেদ তৃষা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আফসীন আহমেদ তৃষার (২৭) মৃত্যু নিয়ে এখনো রহস্য কাটছে না। রাজধানীর আওয়াল টাওয়ারের নিচে তার মরদেহ পাওয়া যায়। কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা এখনো জানা জানা যায়নি। 

ঢাবির আইবিএ বিভাগের সাবেক এ মেধাবী শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার মাত্র সপ্তাহখানেক আগে আওয়াল টাওয়ারে অবস্থিত একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। এ ঘটনায় বনানী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করছেন নিহতের স্বামী চলচ্চিত্র নির্মাতা সানাউল কবির সিদ্দিক। তবে ঘটনার এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও তৃষার মৃত্যুর আসল কারণ জানা যায়নি।

ঘটনার শুরুতে তৃষা আত্মহত্যা করেছে এমন সন্দেহ থাকলেও এখন এ বিষয়ে পরিবার ও পুলিশ কিছুই পরিষ্কার করে বলছে না। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তৃষার আত্মহত্যা করার কোনো কারণ নেই, এটি দুর্ঘটনা ছিল। আর পুলিশ প্রথমে আত্মহত্যার সন্দেহ করলেও এখন বলছে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত এ বিষয়ে তারা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না।

তৃষার পরিবার জানায়, চার বছর আগে তৃষার বাবা মারা যান। তার মা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মাঝখানে তৃষা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, সঙ্গে চলে যায় তার চাকরিও। এসব বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন তৃষা। তবে এসব কারণে তৃষা আত্মহত্যা করতে পারেন না বলে জানিয়েছেন তার স্বামী সানাউল কবির সিদ্দিক।

তৃষা ও সানাউল কবির সিদ্দিক কবিরের বিয়ে হয় ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে। এরপর থেকে তারা রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বাসায় থাকতেন। তৃষার মৃত্যুর বিষয়ে তার স্বামী চলচ্চিত্র নির্মাতা সানাউল কবির সিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, তৃষার আত্মহত্যা করার প্রশ্নই আসে না। পারিবারিকভাবে আমরা নিশ্চিত, তিনি আত্মহত্যা করতে পারে না। তার মৃত্যুটি দুর্ঘটনাবশত হয়েছে। যদিও তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানা কারণে বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন, কিন্তু এই কারণে তৃষা আত্মহত্যা করতে পারেন না।

আত্মহত্যা নাকি দুর্ঘটনা এ বিষয়ে পুলিশ এখনো নিশ্চিত না হলেও তারা দুটি বিষয়কে সামনে রেখেই তদন্ত করে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে পুলিশের সন্দেহ পারিবারিক কোনো কারণে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন তৃষা।

বনানী থানার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভবনটির ১৪ তলায় অবস্থিত একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন তৃষা। তিনি ভবনের সিঁড়িঘরের ফাঁক দিয়ে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করছেন বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করেছে। তারা পরিবারের সূত্রে জানতে পেরেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন। তবে বিষণ্ণতায় ভোগার যেসব কারণ পরিবার বলছে তা সত্য কিনা পুলিশ যাচাই করছে। এসবের বাইরেও অন্য কোনো কারণ আছে কি না, যা পরিবারের পক্ষ থেকে লুকানো হচ্ছে- তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। 

থানা সূত্রে আরও জানা যায়, ঘটনার দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তারা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ঘটনার দিন স্বাভাবিকভাবে অফিস থেকে বের হয়ে আসেন তৃষা। পুলিশ ধারণা করছে, এরপরই কোনো তলা থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন তৃষা।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বনানী থানার উপ-পরিদর্শক মাহফজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অপমৃত্যুর মামলা হলেও ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত করছি। তদন্তে কোথাও কোনো কিছু বাদ পড়ে যাচ্ছে কি না সেটিও আমরা বারবার ক্রস চেক করে দেখছি। আমরা ইতোমধ্যে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ শুরু করেছি। তবে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর। তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত কারণ জানার চেষ্টা করছি।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে তৃষার মরদেহ বনানীর আওয়াল টাওয়ারের নিচে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় ময়নাতদন্তের জন্য। এসময় পুলিশ নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বিষণ্ণতায় থাকার কারণে আত্মহত্যা করতে পারেন তৃষা। স্বজনরা জানান, ঢাবির আইবিএ বিভাগের মেধাবী ছাত্রী ছিলেন তৃষা। চমৎকার লেখালেখির পাশাপাশি গিটার বাজিয়ে গানও গাইতেন তিনি।

এমএসি/আরএইচ