প্রত্যেকটি ট্যুরিস্ট স্পটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি মো. ইলিয়াছ শরীফ বলেছেন, আমাদের পর্যটনখাতকে শক্তিশালী করতে হলে আগে প্রত্যেকটি ট্যুরিস্ট স্পটের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের যে মাস্টারপ্ল্যানই হোক সেখানে যেন নিরাপত্তায় নিয়োজিত ট্যুরিস্ট পুলিশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও পর্যটন ভবনে ‘পর্যটন গন্তব্যে নিরাপত্তা ঝুঁকি : বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ট্যুরিস্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, পুলিশ সুপার (প্লানিং অ্যান্ড অপারেশন) সরকার নুরুল আমিন।
ইলিয়াছ শরীফ আরও বলেন, ২০১৩ সালে ট্যুরিস্ট পুলিশ গঠন করা হয়। পর্যটক ও পর্যটক স্পটের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয় ট্যুরিস্ট পুলিশকে। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র রক্ষায় আমাদের দরকার একটি স্মার্ট ডেস্টিনেশন। নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকলে বাংলাদেশের পর্যটন স্পটগুলো ভ্রমণে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হবে। সামাজিক নিরাপত্তায় যেমন কমিউনিটির দায়িত্ব আছে, তেমনি পর্যটন খাতে আগ্রহ, নিরাপত্তা বাড়াতে স্থানীয় কমিউনিটির দায়িত্ব আছে।
বিজ্ঞাপন
পর্যটনখাতে বেসরকারি খাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক বৈচিত্রময় বাংলাদেশের পর্যটনখাত। এই খাতের সুরক্ষা, উত্তরোত্তর উন্নতি ও পর্যটনবান্ধব কার্যক্রম বৃদ্ধিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগীতা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে।
প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে জোরদার করতে হবে উল্লেখ করে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) সভাপতি শিবলু আজম কোরেশী বলেন, মাত্র ১৪শ ট্যুরিস্ট পুলিশ নিয়ে আমাদের বিস্তৃত পর্যটন এলাকায় নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। এটা বাস্তবে কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। পুলিশের কার্যক্রমের সাথে কমিউনিটিকে সংযুক্ত করলে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজ অনেকটা সহজ হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে জোরদার করতে হবে।
বিদেশি পর্যটকদের চাহিদার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশি পর্যটকরা পুলিশের নিরাপত্তা পছন্দ করে না। এতে তারা অস্বস্তি বোধ করেন। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। আমাদের দেশে-বিদেশি পর্যটক যারা আসেন, তাদের মূল আকর্ষণ হল পার্বত্য অঞ্চল। এসব জেলায় বিদেশি পর্যটকদের পারমিশন নিয়ে বেশ ভোগান্তিতে পড়ি। ৭-১০ দিন লেগে যায় একটি গ্রুপের পারমিশন বের করতে। কখনও কখনও পারমিশন রিজেক্টেডও হয়ে যায়। কিন্তু পর্যটকদের জন্য পারমিশনের বিষয় সহজ করতে হবে এবং অল্প সময়ে মধ্যে অনলাইনে আবেদনের ব্যবস্থা করা।
বান্দরবানে লোকাল ট্যুরিস্ট গাইডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবনে ট্যুরিস্টদের নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ডিসিরা অনলাইনে ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। কিন্তু বান্দরবানের ডিসি কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। বান্দরবানে যেতে হলে লোকাল ট্যুরিস্ট গাইডের মাধ্যমে যেতে হবে। এ বিষয়টির সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করি। আমাদের সংগঠনের সদস্য যারা গাইড হিসেবে কাজ করেন তারা লোকাল গাইডদের তুলনায় অনেক দক্ষ। বান্দরবানের ডিসি সাহেব কেন লোকাল গাইডদের নিতে বাধ্য করছেন, এটা আমার জানা নেই। আমরা এটার সমাধান চাই।
সভাপতির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব (পর্যটন) তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, আজকের আলোচনায় বেশ কিছু বিষয় উঠে এসেছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে সময় উপযোগী পর্যটন সংক্রান্ত ও বিধির সংশোধন। আমরা এটা নিয়ে ভেবেছি। কাজ করছি। কিভাবে বিদ্যমান আইনকে উপযোগী ও বিধি সংশোধন করে হালনাগাদ করা যায়।
তিনি বলেন, পর্যটনখাতের প্রত্যেকটি সমস্যার সঠিক কারণ আগে খুঁজে বের করতে হবে। এরপর সেটির দ্রুত সমাধানে কাজ করতে হবে। ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড নিবন্ধন আইন অনুমোদিত হয়েছে ২০২১ সালে। দুটি বিধিমালা তৈরির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে এবং অনলাইন নিবন্ধন প্রক্রিয়ার জন্য কাজ করছি। আশা করছি এটি দ্রুতই হবে। আমরা চেষ্টা করছি, এক ছাতার নিচে সব নিবন্ধনের কার্যক্রম নিয়ে আসার জন্য।
জেইউ/এনএফ