দেশের প্রায় ৯ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ বধিরতায় ভোগে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত। এ অবস্থায় শব্দজনিত বধিরতা কমানো ও এটি প্রতিরোধে শহরের শব্দ দূষণ হ্রাসকরণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

বুধবার (২ মার্চ) বিশ্ব শ্রবণ দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ঢাকা ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশে সোসাইটি অব অটোলজির উদ্যোগে আয়োজিত ‘বধিরতা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, বাংলাদেশের ৯ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন মাত্রায় বধিরতায় ভোগে। তবে দেশে এ বধিরতার মাত্রা সঠিকভাবে নিরূপণের জন্য পুনরায় পরীক্ষা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, কর্ণ ও শ্রবণ সেবাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। পাশাপাশি নবজাতক শিশুদের বধিরতা আছে কি-না তার পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করাও জরুরি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উদ্যোগে বরাবরের মতো এবারও দিবসটি সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে। এবারের বিশ্ব শ্রবণ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সকলের জন্য শ্রবণ পরিষেবা’। এ দিবসে বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান শ্রবণ প্রতিবন্ধী বা শ্রবণহ্রাসসহ শ্রুতিহীন মানুষের সংখ্যা নির্ণয়, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক এম আব্দুল্লাহ, অধ্যাপক কামরুল হাসান তরফদার, অধ্যাপক বেলায়াত হোসাইন
সিদ্দিকী, অধ্যাপক ইউসুফ ফকির, অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম, অধ্যাপক আবু হানিফ, অধ্যাপক নুরুল ফাত্তাহ রুমি, অধ্যাপক খোরশেদ মজুমদার, অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম, অধ্যাপক জহুরুল হক, অধ্যাপক এম এ মতিন, অধ্যাপক আকাইদুজ্জামান, অধ্যাপক নাসিমা আখতারসহ আরও প্রায় ৩০০ শতাধিক নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ও অডিওলজিস্ট।

আলোচনা সভায় বক্তারা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন। যার মধ্যে রয়েছে-

১. সকল সরকারি মেডিকেল কলেজে অডিওলজি বিভাগ চালু এবং উন্নত করা।

২. শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য কানে শোনার যন্ত্র সহজলভ্য করা।

৩. আগামী ৫ বছরের জন্য বধিরতা রোধে জাতীয় পর্যায়ে কর্মকৌশল গ্রহণ।

৪. স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে অডিওলজির উপর স্নাতক কোর্স চালু করা।

৫. সর্বোপরি চিকিৎসক, অডিওলজিস্ট ও স্পীচ থেরাপিস্টসহ শ্রবণ পরিচর্যায় নিয়োজিত জনশক্তিকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা।

সভায় কানের খৈল নিরাময়ে ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস লি. উৎপাদিত নতুন ওষুধ ‘ওয়াক্সসল’ সম্পর্কে আলোচনা করেন অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, শ্রবণশক্তি কম হওয়ার প্রধান কারণগুলোর অন্যতম হচ্ছে কানের খৈল শক্ত হয়ে জমাট বাঁধা। বাংলাদেশে এর হার ১১.৫%, যা অনেকটাই প্রতিরোধ যোগ্য। ওয়াক্সসল কানের খৈলজনিত বধিরতা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মোসাদ্দেক হোসেন বধিরতা নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকার উপর আলোকপাত করেন। এ বিষয়ে আরও গবেষণা ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় নতুন নতুন ওষুধের যথাযথ ব্যবহারের ওপর তিনি মতামত দেন।

অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে সোসাইটি অব অটোলজির সভাপতি অধ্যাপক আবুল হাসনাত জোয়ারদার। তিনি শব্দ দূষণের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবহিতকরণসহ জনসচেতনতা সৃষ্টি, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত বিধান এবং শব্দ দূষণ বিধিমালার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করার সুপারিশ করেন।

টিআই/এমএইচএস