আশ্বাস মেলেনি, রেলের অস্থায়ী শ্রমিকদের অবস্থান অব্যাহত
বাংলাদেশ রেলওয়েতে নিয়োগ পাওয়া অস্থায়ী শ্রমিকদের (টিএলআর) চাকরি স্থায়ীকরণ, আউটসোর্সিং প্রথা বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে তিনদিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে অবস্থায়ী শ্রমিক পরিষদ। গত রোববার (১৬ অক্টোবর) সকালে কমলাপুর রেলস্টেশন প্লাটফর্মে ঝটিকা মিছিল করে বিভাগীয় রেলওয়ের ম্যানেজারের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে এ অবস্থান শুরু করেন সংগঠনের সদস্যরা।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) অবস্থান কর্মসূচির ৩ দিন পার হতে চললেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি আন্দোলনকারীরা। ফলে কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।
বিজ্ঞাপন
আন্দোলনে থাকা বাংলাদেশ রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিক পরিষদের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। গত দুই দিনে আমাদের দুইজন সহকর্মী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে রয়েছে। আরো দুই-তিন জনের অবস্থা খারাপ।
তিনি আরো বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে রেলের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছি, স্মারকলিপি দিয়েছি, কিন্তু কোনো আশ্বাস মেলেনি। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের কোনো নির্দেশনা দিক, তারপরে আমরা স্থান ছেড়ে যাব।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ রেলওয়ের জনবল সংকট নতুন কথা নয়। জনবল পূরণে শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি শূন্য পদের বিপরীতে এতোদিন অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে আসছিল। কিন্তু বর্তমানে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে অস্থায়ী শ্রমিকরা আউটসোর্সিং প্রক্রিয়া বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ রেলওয়েতে অস্থায়ী কর্মরত শ্রমিকদের পদগুলো হচ্ছে- মেকানিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং (গেট কিপার, ওয়েম্যান, লোকোখালাসী, ক্যারেজ খালাসী) সিগন্যালিং ইলেকট্রিক্যাল ও ট্রান্সপোর্টেশন (গেট কিপার, পোর্টার, পয়েন্টসম্যান) ইত্যাদি।
আন্দোলনে থাকা বাংলাদেশ রেলওয়ের অস্থায়ী এক শ্রমিক বলেন, এখানে দারোয়ান, রেলের ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন পদে অস্থায়ীভাবে মোট ৭ হাজার শ্রমিক কর্মরত আছেন। আমাদের মধ্যে অনেকের চাকরির বয়স ৩-১০ বছর। বর্তমানে আমাদের বয়স ৩৫-৪০ বছরের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের অন্য কোথাও চাকরি করার বয়স নেই।
তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়েতে কখনও আউটসোর্সিং খাত ছিল না। বর্তমানে আমাদের অস্থায়ী শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করার জন্য এটা চালু করা হয়েছে। যা আমাদের জীবন ধ্বংস করার খাত বলে বিবেচিত। আমরা এই আউটসোর্সিং প্রথা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
সদস্য সচিব মোহাম্মদ হোসেন বলেন, রেলওয়েতে ব্রিটিশ আমল থেকেই অস্থায়ী শ্রমিকরা ছিলেন। পরে তাদেরকে শ্রম আইনের ভিত্তিতে স্থায়ী করা হতো। কিন্তু বর্তমানে তা কার্যকর হচ্ছে না। শ্রম আইনে বলা আছে, অস্থায়ীভাবে তিন বছর কাজ করার পরে রাজস্ব খাতে চাকরি স্থায়ী হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০১৭ সালে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু বিষয়টি এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।
তিনি বলেন, গত ৩০ জুন রেলের সব অস্থায়ী শ্রমিককে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য একটি চিঠি জারি করা হয়। এসময় রেলের চট্টগ্রাম ও লালমনিরহাট বিভাগের ক্যারেজ শ্রমিকদের কাজ থেকে বাইরে রাখা হয়। ধীরে ধীরে সব অস্থায়ী শ্রমিককে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। গত জুন মাস থেকে আমাদের কাজের কোনো বাজেট নেই। আমরা রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, সচিব হুমায়ুন কবির, মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদারের কাছে চিঠি দিয়েছি। রেলের মহাপরিচালক আমাদের বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের পর তোমাদের চাকরি নেই।
অবস্থান কর্মসূচিতে শতাধিক রেলের অস্থায়ী শ্রমিকরা আছেন। তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এখানে অবস্থান করবেন বলে জানান।
এমএইচএন/জেডএস