‘ইসির নিবন্ধন পাওয়া যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-ভারতের চেয়ে কঠিন’
রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন পাওয়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারতের চেয়ে কঠিন। এজন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ আইনে ৯০বি ধারা সংযোজন করে রিপ্রেজেন্টেশন অব পিপল (এমিন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স, ২০০৮ নামক কালো আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পদ্ধতি বাতিলের দাবি পরিষদ।
রোববার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পদ্ধতি বাতিলের দাবি পরিষদ বিক্ষোভ প্রদর্শন ও স্মারকলিপি প্রদান করেন।
বিজ্ঞাপন
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পদ্ধতি বাতিলের দাবি পরিষদের আহ্বায়ক সৈয়দ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘সাম্রাজ্যবাদী সম্প্রসারণবাদী শক্তিসমূহের মদদপুষ্ট ১/১১ এর সরকার দেশকে রাজনীতিশূন্য করতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ আইনে ৯০বি ধারা সংযোজন করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ আইনে ৯০বি ধারা সংযোজন করে রিপ্রেজেন্টেশন অব পিপল (এমিডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স, ২০০৮ নামক কালো আইনটি জাতির কাঁধে চাপিয়ে দেয়। যাতে নতুন দলগুলোর জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় অফিস ও গঠনতন্ত্রের পাশাপাশি কমপক্ষে ১০টি জেলা কমিটি, ৫০টি থানা/উপজেলা কমিটি ও অফিসের বাধ্যবাধকতা ছিল।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রাচীন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে একই ১/১১ সরকারের ধারাবাহিকতায় দেশকে রাজনীতি শূন্য করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার লক্ষে ২০০৯ সালে রিপ্রেজেন্টেশন অব পিপল অর্ডার (এমিন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট ২০০৯ সংসদে পাশ করে। এই আইনে ১০টি জেলা কমিটির স্থলে ২১টি জেলা কমিটি, ৫০টি থানা/ উপজেলা কমিটির পরিবর্তে ১০০টি থানা/উপজেলা কমিটি এবং প্রত্যেক থানা উপজেলা কমিটির অধীনে কমপক্ষে ২০০ সদস্যের বাধ্যবাধকতা আনা হয়।’
বিজ্ঞাপন
আহ্বায়ক সৈয়দ হারুন অর রশীদ বলেন, পুরাতন দলগুলোর ক্ষেত্রে স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন পাওয়া অথবা ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে থাকার বিধান চালু করা হয়। দেশের খ্যাতিমান রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী মহলের নিকট গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্যের রেজিস্ট্রেশন অব পলিটিক্যাল পার্টজ অ্যাক্ট-১৯৯৮ অনুসারে কেন্দ্রীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় অফিস ও দলীয় গঠনতন্ত্র থাকলে যেকোনো রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের যোগ্য হয়। বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে রিপ্রেজেন্টেশন অব পলিটিক্যাল অ্যাক্ট-১৯৫১ অনুসারে কেন্দ্রীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় অফিস, গঠনতন্ত্র ১০০ নিবন্ধিত ভোটার সদস্য থাকলে যেকোনো রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেতে পারে। রাজনীতিক মহলে সর্বাধিক পরিচিত ও বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক আলোচিত গণতান্ত্রিক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের দ্য পলিটিক্যাল পার্টিস (রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড রেগুলেশন) অ্যাক্ট অনুসারে কেন্দ্রীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় অফিস, গঠনতন্ত্র এবং ১০০ জন নিবন্ধিত ভোটার সদস্য থাকলে যেকোনো রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের যোগ্যতা লাভ করে। গণতন্ত্রপন্থী অন্য সব রাষ্ট্রসমূহেও রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে একই রূপ আইন চালু রয়েছে। বর্তমানে ভারতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ২০০টি। যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রেও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক করে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশেও এ সংখ্যা বাংলাদেশে নিবন্ধিত দলের চেয়ে অনেক বেশি।
তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনে দলের নিবন্ধন পেতে কমপক্ষে ২০ হাজার সদস্য থাকতে হয়। আওয়ামী দুঃশাসনের মধ্যে এতগুলো দুঃসাহসী লোক খুঁজে বের করাও বড় দঃসাহসী কাজ। আবার প্রতি মাসে অফিস ও অন্যান্য খরচ বাবদ কমপক্ষে ২৫/৩০ লাখ টাকা ব্যয় করা আরও বেশি দুঃসাধ্য। এই আইন অনুসারে দল নিবন্ধন করে রাজনীতি করা কেবলমাত্র দুর্নীতিবাজ, কালোবাজারী, মাদককারবারী, মানবপাচারকারী, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজসহ সমাজবিরোধী শক্তি ও সরকারের দালাল শ্রেণির জন্য কেবল সহজসাধ্য। তাছাড়া, এই আইন সংবিধানের মৌলিক চেতনা ও মানবাধিকার পরিপন্থী। এই আইন বিদ্যমান থাকলে দেশ একদিন রাজনীতি শূন্য হয়ে পড়বে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রার্থিতার জন্য ১ শতাংশ ভোটারের আগাম স্বাক্ষর ভোটারদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি অমানবিক ও অসাংবিধানিক।
আহ্বায়ক সৈয়দ হারুন অর রশীদ আরও বলেন, আমরা ‘রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পদ্ধতি বাতিলের দাবি পরিষদ’ এর ব্যানারে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ আইনের ৯০বি সহ সব অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও কালো আইন বাতিলের দাবিতে দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। অথচ এই কালো আইন বিদ্যমান রেখেই নতুন করে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলমান রাখা হয়েছে। আমরা এই প্রক্রিয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ আইনের ৯০বিসহ সকল কালাকানুন বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় কমিটি কেন্দ্রীয় অফিস ও গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক মানের নিবন্ধন আইন আইন চালু ও সারা বছরব্যাপী নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু রাখার দাবি জানাচ্ছি।
এসআর/এমএ