জামায়াতের সঙ্গে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র কোনো সংযোগ বা যোগাযোগ আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এ কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা রাফাত সাদিক জামায়াতের আমিরের ছেলে। পিতার সংগঠনের (জামায়াত) কোনো নির্দেশনা তার কাছে ছিল কি না বা তাদের দ্বারা নির্দেশিত হয়ে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হয়েছেন কি না তা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে দেখা হবে।

বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৩টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিটিটিসি প্রধান। 

জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে বুধবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় জামায়াত আমিরের ছেলে ডা. রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে।
 
সিটিটিসির দাবি, গ্রেপ্তার হওয়া ডা. রাফাত চৌধুরী নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছিলেন।

আরও পড়ুন : ‘আব্বু তুমি ভুল পথে আছো, আত্মসমর্পণ করো’

আজকের সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, গত ১ নভেম্বর রাজধানীর সায়দাবাদ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সেজাদুল ইসলাম সাহাব তানিম ওরফে ইসা ওরফে আরাফাত (২৪), মো. জাহিদ হাসান ভূঁইয়া (২১) ও সৈয়দ রিয়াজ আহমদ (২২) নামে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা সিলেট থেকে হিজরত করেছিলেন। বাংলাদেশে সম্প্রতি যত যুবক হিজরত করেছেন এর মধ্যে সিলেটের বেশি। সর্বপ্রথম সিলেট থেকেই হিজরত শুরু করেন তারা। সেই হিজরতের মাস্টার মাইন্ড ডাক্তার রাফাত।

তিনি বলেন, ডাক্তার রাফাত একটি মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাস করে ইন্টার্ন করছিলেন। যারাই সিলেট থেকে হিজরত করেছে, নতুন করে দীক্ষা ও রেডিকালাইডজ হয়েছে এর নেপথ্যে মূল ব্যক্তি ছিলেন ডাক্তার রাফাত।

ডাক্তার রাফাতের নেতৃত্বেই ২০২১ সালের জুন মাসে ১১ যুবক সিলেট থেকে হিজরত করে। তখন তা বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। তারা বান্দরবানে যায় কিন্তু কোনো কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তারা সাত দিন পর সিলেটে ফিরে আসে। তবে তৎপরতা বন্ধ রাখেনি। ডাক্তার রাফাতের মতো বড় সহযোগী ও সংগঠক তাহহিয়াত। সে আবার গত বছরের আগস্টে পুনরায় হিজরত করে। নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেরা এক যুবককে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করি। তাহহিয়াতের ছবি দেখালে তিনি তা শনাক্ত করেন। তাহহিয়াতসহ বেশ কয়েকজন তখন (২০২১ সালের আগস্টে) প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যোগদান করেন।

কুমিল্লার কিছু যুবক বাড়ি ছেড়েছে- এমন খবরের পর দেশে নতুন জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতার বিষয় উঠে আসে। এরপর সিটিটিসিসহ অন্যান্য বাহিনী ব্যাপক অভিযান শুরু করে। এর ফলে নতুন সংগঠনের সদস্যরা অনেকে গা ঢাকা দেয়। তারা আবার সিলেট থেকে হিজরতের প্রস্তুতি নেয়। গত ১ নভেম্বর গ্রেপ্তার হওয়া তানিম, আনবির ও জাহিদসহ আরও অনেককে যুক্ত করে পুনরায় বড় ধরনের দল নিয়ে হিজরতের কথা ছিল। তবে পুলিশি তৎপরতায় তারা এটা করতে পারেনি। ওই তিনজনের দেওয়া তথ্যে ডা. রাফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আসাদুজ্জামান বলেন, ডা. রাফাত দীর্ঘদিন ধরে সিলেট অঞ্চলের ধর্মভীরু যুবকদের জিহাদ ও জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ, প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছিল। কোরআন প্রশিক্ষণের আড়ালে জঙ্গিবাদের দীক্ষা দিচ্ছিলেন তিনি। তারা বেশ কয়েকজন যুবককে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রশিক্ষণের সক্ষমতাও তারা যাচাই করেছে। আমরা সেই বোমা বানানোর কারিগরকে শনাক্ত করেছি। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

হিজরত করতে প্রস্তুত সিলেট অঞ্চলের আরও বেশ কয়েকজন যুবককে আমরা শনাক্ত করেছি। হিজরতের আগেই আমরা মাস্টার মাইন্ড ডা. রাফাতকে গ্রেপ্তার করেছি। তাকে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছি। রিমান্ড পেলে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব, সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সিলেটকেন্দ্রিক তাদের পরিকল্পনা জানতে পারব।

ডা. রাফাতের সঙ্গে জামায়াত বা শিবিরের কোনো যোগাযোগ রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক সময় শিবির করেছেন ডা. রাফাত। তবে তার পদ কী ছিল তা জানা যায়নি। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে তার যে সিক্রেট যোগাযোগ আছে তা খতিয়ে দেখছি।

অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের মতো এদেরও নাশকতার লক্ষ্য আছে কি না জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, এই সংগঠনের মাস্টার মাইন্ড শামীম মাহফুজ। তার সহযোগী তমাল। তাদের গ্রেপ্তার করা গেলে এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানা যাবে। তবে এই সংগঠন এখনো সেই পর্যায়ে যেতে পারেনি। প্রস্তুতি পর্বেই আমরা তাদের থামিয়ে দিতে পেরেছি।

জেইউ/এসকেডি