অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনার এবং জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিনিধিদল

অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনার এবং জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতদের সমন্বয়ে গঠিত এক প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের শরণার্থী সেবা কার্যক্রমে ধারাবাহিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশ সরকার এবং কক্সবাজারে আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তাদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দলটি এ আশ্বাস দেয়।

শনিবার (৬ মার্চ) ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গত ৩ ও ৪ মার্চ সফরকালে প্রতিনিধিরা একটি দুর্যোগ প্রস্তুতি প্রকল্প, খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম, একটি শিক্ষাকেন্দ্র ও একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ও আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোভিড-১৯ মোকাবিলা কার্যক্রমে তাদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।

২০২০ সালের অক্টোবরে রোহিঙ্গা কার্যক্রমের দাতা সম্মেলনের পর এটিই প্রথম সফর। ওই সম্মেলনে আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য অতিরিক্ত প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের ত্রাণ তহবিলের সংস্থান হয়েছিল।

২০১৭ সালে মিয়ানমারে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এ সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহযোগিতা দিয়ে আসছে। তখন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ২৪০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থসহায়তা দিয়েছে, জাপান দিয়েছে ১৪০ মিলিয়ন ডলার, এবং বাংলাদেশের আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠীসহ ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ১.২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা নিয়ে সাড়া দিয়েছে।

প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সরকার এবং ইন্টার সেক্টর কো–অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে।

আন্তর্জাতিক এই মিশনের নেতারা তাদের পৃথক মন্তব্যে আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থাগুলোর মধ্যে শক্তিশালী সহযোগিতা এবং এ সংকট নিরসনে তাদের চলমান প্রতিশ্রুতির বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনার ব্রুয়ার বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের জন্য বাংলাদেশের প্রতি আমাদের জোরালো সহায়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করতে চাই। করোনার কারণে গত বছর কক্সবাজারসহ সব জায়গায় অনেক নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছিল। সংক্রমিতের সংখ্যার স্থিতিশীলতা এবং টিকা কার্যক্রম চালু হওয়া সত্ত্বেও মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো যাতে রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠীর জন্য অত্যাবশ্যক সহায়তা দিতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে আমাদেরকে আগের যেকোনো সময়ের মতোই বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষগুলোর সঙ্গে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।

জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমাদের সহায়তা আরও ত্বরান্বিত করা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করার উদ্দেশ্যে আমরা এ যৌথ মিশনে যুক্ত হয়েছি। কক্সবাজারে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত জনগোষ্ঠীকে শিগগির ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে জাপান কাজ করে যাবে। এ সংকটের স্থায়ী সমাধান বের করা একটি অবারিত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক গঠনের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করি, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে শীঘ্রই শিক্ষা কার্যক্রমসহ সব সেবা কার্যক্রম পুনরায় চালু হবে।’

মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শরণার্থী বা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা ও আশ্রয় দানকারী জনগোষ্ঠীর কথা ভুলে যায়নি। শরণার্থীদেরকে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদার সঙ্গে ও স্থায়ীভাবে ফিরিয়ে নেবার লক্ষ্যে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমারকে উৎসাহিত করতে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করব। সেই লক্ষ্যে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা সকলকে মুক্তি দান এবং সাংবাদিক, আন্দোলনকর্মী ও অন্যান্যদের প্রতি আক্রমণ বন্ধে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বানকারী সকলের প্রতি আমরা জোর সমর্থন জানাচ্ছি।

‘এখন সামরিক বাহিনীকে সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে হবে এবং অতিরিক্ত সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে হবে’ বক্তব্যে যোগ করেন রাষ্ট্রদূত।

এনআই/এমএইচএস