ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১ ও ৩২) নয়টি ধারাকে সংবিধান প্রদত্ত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সঙ্গে ‘সাংঘর্ষিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে সম্পাদক পরিষদ। একইসঙ্গে এ আইনে গ্রেফতার হওয়া সংবাদকর্মী ও মুক্তমনা লেখকদের মুক্তি এবং তাদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছে পরিষদ।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনার দাবি জানিয়ে শনিবার (৭ মার্চ) এক বিবৃতি দিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। এতে বলা হয়েছে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আইনটি পর্যালোচনা করার কথা বলেছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে তদন্তের আগেই যেন গ্রেফতার করা না হয়, এমন ব্যবস্থা করা হবে। পরিষদ প্রাথমিকভাবে আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে এবং অনতিবিলম্বে এটি কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আপত্তিকর ধারাগুলো সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা সেগুলো সংশোধনের সুপারিশ করেছিলেন। সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া হলে আজকের এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সম্পাদক পরিষদ বলেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগে সংবাদকর্মী ও মুক্তমত প্রকাশকারী ব্যক্তিরা ক্রমাগতভাবে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এমন আশঙ্কা আইনটি তৈরির সময়ই করেছিল পরিষদ। একথা বলা অত্যুক্তি হবে না, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আশঙ্কার চেয়ে আরও কঠিনভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। একজন মুক্তমনা লেখক মুশতাক আহমেদকে জীবন দিয়ে তা প্রমাণ করে যেতে হলো।

তবে ১০ মাস কারাবন্দি থাকার পর কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে জামিন দেওয়ায় আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। পরিষদ বলেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংবাদকর্মী ও লেখকদের গ্রেফতার করে তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে নির্দয় আচরণ করছে, তা অত্যন্ত অনভিপ্রেত।

‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আমরা কেন উদ্বিগ্ন’ তা ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছিল সম্পাদক পরিষদ। ব্যাখ্যায় আইনটির ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) নিয়ে সম্পাদক পরিষদ তাদের উদ্বেগ তুলে ধরেছিল। পরিষদ বলেছিল, ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটন প্রতিহত করা ও ডিজিটাল অঙ্গনে নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়নের চেষ্টা করতে গিয়ে এমন একটি আইন করা হয়েছে, যা সংবাদমাধ্যমের কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি ও বিষয়বস্তুর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে। এ আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১ ও ৩২ ধারা সংবিধান প্রদত্ত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই ধারাগুলো নাগরিকদের বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণেরও সুযোগ সৃষ্টি করবে।

সম্পাদক পরিষদ বলেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এমন এক আতঙ্ক ও ভীতির পরিবেশ তৈরি করেছে- যেখানে সাংবাদিকতা, বিশেষত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এ আইন সংবাদমাধ্যমের কর্মী ছাড়াও কম্পিউটার ও কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইত্যাদি ব্যবহারকারী সব ব্যক্তির মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করছে। আইনের ৪৩ ধারা পুলিশকে বাসাবাড়িতে প্রবেশ, অফিসে তল্লাশি, লোকজনের দেহ তল্লাশি এবং কম্পিউটার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, সার্ভার ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম-সংক্রান্ত সবকিছু জব্দ করার ক্ষেত্রে সীমাহীন ক্ষমতা দিয়েছে।

পুলিশ এ আইনে দেওয়া ক্ষমতাবলে পরোয়ানা ছাড়াই সন্দেহবশত যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারছে। এক্ষেত্রে পুলিশের কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এ আইনে অস্পষ্টতা আছে এবং এতে এমন অনেক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার ভুল ব্যাখ্যা হতে পারে এবং সহজেই সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

পিএসডি/এমএইচএস