কারাগারে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা : সংশ্লিষ্টতা পেলেই ব্যবস্থা
ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত চত্বর থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দেশে তোলপাড় চলছে। দেশের আদালত ও কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, আদালত থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ৩ মাস আগে কাশিমপুর কারাগারে হয়েছিল। কীভাবে আদালত থেকে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়া হবে, কোন পথে পালানো হবে—সব পরিকল্পনা হয় কাশিমপুর কারাগারে।
বিজ্ঞাপন
আরও জানা যায়, কারাগার বরাবরই জঙ্গিদের যোগাযোগ ও পরিকল্পনার জন্য নিরাপদ স্থান হয়ে উঠেছে। তারা সেখানে টাকা দিয়ে নিয়মিত সংগঠনের বাইরে থাকা সদস্যদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখছে এবং নানা পরিকল্পনা করছে। এসব বিষয়ে নানা সময় কারা কর্তৃপক্ষকে বার বার পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হলেও তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আদলত প্রাঙ্গণ থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনার সফল পরিকল্পনা করতে পেরেছে আনসার আল ইসলাম। গোয়েন্দা তথ্য মতে, কারাগারে সব থেকে বেশি এখন আনসার আল ইসলামের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে।
নাম প্রকাশে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে কারাগারের এমন অবস্থা ১-২ হাজার টাকা দিলে জঙ্গিরা সারারাত নিজেদের সেলে ফোন ব্যবহার করতে পারছে। সেখানে বসেই তাদের যাবতীয় পরিকল্পনা হয়।
বিজ্ঞাপন
এদিকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পরিকল্পনা কারাগারে হয়েছে কি না তা জানতে এবার নড়েচড়ে বসেছে কারা কর্তৃপক্ষ। তারা বিভিন্নভাবে খোঁজ নিচ্ছে এবং তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছেন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, যদি প্রমাণিত হয় কারাগারে জঙ্গিরা বসে আদালত থেকে পালানোর পরিকল্পনা করেছে বা এই পরিকল্পনা করতে কারাগারের কেউ সহযোগিতা করেছে বা তাদের ফ্যাসিলিটেট করেছে, তাহলে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ ধরনের শীর্ষ জঙ্গিদের খুব হাই সিকিউরিটি সেলে রাখা হয় এবং সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় রাখা হয় বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গত রোববার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে একটি মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। হাজিরা শেষে পুলিশ সদস্যরা তাদের নিয়ে আদালত চত্বর ছেড়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে করে শামীম ও সাকিবকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় আগে থেকেই ওৎ পেতে থাকা অন্যান্য জঙ্গিরা। শামীম ও সাকিব এই দুই জঙ্গি দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আসামি ছিনতাইয়ের মাস্টারমাইন্ড হলেন নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের প্রধান সমন্বয়ক মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া। তার পরিকল্পনায় এই ছিনতাই অপারেশন পরিচালনা করেন সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মশিউর রহমান ওরফে আইমান।
গ্রেপ্তার থাকা জঙ্গি আরাফাত ও সবুরকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, কনডেম সেলে থাকা ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি আসামিরা প্রায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতেন। কারাগারে বসেই আসামি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা হয়।
প্রথমে ত্রিশালের জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার মতো প্রিজন ভ্যানে হামলা করে সহযোগীদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে কাশিমপুর থেকে পুরান ঢাকায় আদালত পর্যন্ত আনা-নেওয়ার সময় প্রিজন ভ্যানে হামলা করাটা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয় তাদের।
তাই তুলনামুলক কম নিরাপত্তা থাকায় ছিনতাই অপারেশনের স্পট হিসেবে আদালত প্রাঙ্গণকে বেছে নেওয়া হয়। আর অপারেশনের জঙ্গি সদস্যদের ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যেতে দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছিল সহযোগীরা।
জানা গেছে, ঘটনার পর তদন্তের অংশ হিসেবে সোমবার (২১ নভেম্বর) সিটিটিসি একাধিক টিম কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার পরিদর্শনে যায়। প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে তারা কারাগার থেকে কার মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে জঙ্গিরা বাইরে যোগাযোগ করেছিল তা জানার চেষ্টাও চলছে।
ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আদালত চত্বর থেকে দুই জঙ্গি সদস্যকে ছিনতাই অপারেশনে নেতৃত্বদানকারীর নাম-পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। এই অপারেশনে তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগীকেও শনাক্ত করা হয়েছে। জঙ্গি ছিনতাই অপারেশনে নেতৃত্বদানকারীসহ সবাইকে গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে আমরা কাজ করছি।
এমএসি/কেএ