বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সেই ভাষণের ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন করল চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানা

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। ওইদিন তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দুপুর ২টা ৪৫ মিনিট থেকে বিকেল ৩টা ৩ মিনিট পর্যন্ত মোট ১৮ মিনিটের ভাষণে স্বাধীনতার রূপরেখা এঁকে দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ঐতিহাসিক সেই ভাষণের ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন করল চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানা। পাশাপাশি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের স্বীকৃতি প্রাপ্তিতে আনন্দ উদযাপনও করা হয় একই অনুষ্ঠানে। বিশেষ এদিনে স্মৃতিচারণ করেন ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে সশরীরে উপস্থিত থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুস।

ডবলমুরিং থানার উপ-পরিদর্শক কিশোর মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আমাদের সময় চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান হামিদ উল্লাহ, দৈনিক সমকাল চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সারওয়ার সুমন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার মো. আব্দুল ওয়ারিশ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. অনুপম সেন বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকেই আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা শুরু হয়। ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালি স্বাধীনতার মন্ত্র পায়। সে মন্ত্রেই সশস্ত্র হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে আনে বাংলাদেশ।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রতিটি পাড়া মহল্লায় সংগ্রাম কমিটি গঠন করতে বলেন। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও কমিটি গঠন করি। ১৭ মার্চ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিনই লালদিঘী মাঠে কমিটির কর্মসূচি পালন করা হতো।

কেক কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়

বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল বলেই এত উন্নয়ন হচ্ছে মন্তব্য করে অনুপম সেন বলেন, ১৯৭১ সালে দেশ এক কোটি টন শস্য উৎপাদন করত। এখন চার কোটি টন শস্য উৎপাদন করছে। বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু করেছে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল করছে, ইকোনমিক জোন করছে। মাথাপিছু আয় হয়েছে দুই হাজার ডলারের উপর। উন্নয়নের যে ধারাবাহিকতা চলছে তা অব্যাহত থাকলে, আগামী ২০৫০-এর মধ্যেই আমরা উন্নত দেশে পরিণত হবো।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, পাকিস্তানিদের অস্ত্র ছিল। তাদের গোলাবারুদের বিপরীতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণই ছিল সবচেয়ে বড় মরণাস্ত্র। আগে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ছিল না। তবে এ ভাষণের পর বাংলাদেশের ৭ কোটি মানুষই সৈনিক হয়ে যায়। বাঙালির প্রতিটি হাতই তখন হয়ে উঠে অস্ত্র।

চট্টগ্রামে স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের অস্ত্র ছিল না। কোতোয়ালি থানার তৎকালীন ওসি আব্দুল খালেক আমাদের পুলিশের অস্ত্রাগার খুলে দেন। যার অপরাধে হানাদার বাহিনী তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ সময় ওসি আব্দুল খালেকের সম্মানে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি এলাকার যেকোনো একটি সড়কের নাম তার নামে নামকরণের দাবি জানান এই মুক্তিযোদ্ধা।

স্বাগত বক্তব্যে ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য যেভাবে বাংলাদেশ পুলিশ রাজারবাগ থেকে প্রথম প্রতিরোধ গড়েছিল। একইভাবে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, মানুষের জানমাল নিরাপত্তা রক্ষায়ও বাংলাদেশ পুলিশ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশের অদম্য অগ্রযাত্রায় সহায়ক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ পাশে থাকবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

কেএম/এমএইচএস