সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় মন ও মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন
বর্তমানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মোট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীদের সংখ্যা ৫৪ লাখ ৫৫ হাজার ১০৫ জন। জেলা পর্যায়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং এই নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য ব্র্যান্ডিংয়েরও কাজ করা হচ্ছে…
দেশে নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন, সমঅধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের মন ও মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ঢাকা পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহাদাত হোসেন।
প্রধানমন্ত্রী যখন ২০১১ সালে জয়িতা ফাউন্ডেশন উদ্বোধন করেন তখন বলেছিলেন, জয়িতাদের কার্যক্রম সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। সেই জয়িতাদের সম্মাননা দেওয়া হবে। এটাও আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম
বিজ্ঞাপন
ঢাকা পোস্ট : নারী দিবস পালন উপলক্ষে আপনার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কী কী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে?
ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা : দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব নারীকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় অনেক পদক্ষেপ ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আমরা যে অনুষ্ঠান করব সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে সংযুক্ত হবেন। শিশু একাডেমিতে এ অনুষ্ঠান হবে। এছাড়া আমাদের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের যে অফিস আছে সেখানেও যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন হবে।
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রী যখন ২০১১ সালে জয়িতা ফাউন্ডেশন উদ্বোধন করেন তখন বলেছিলেন, জয়িতাদের কার্যক্রম সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। সেই জয়িতাদের সম্মাননা দেওয়া হবে। এটাও আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম।
তৃণমূলের অসহায় নারীদের তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫৪ লাখ নারীকে ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য দেশে এক কোটি নারীকে ক্ষমতায়ন করা
ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, প্রতিমন্ত্রী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়
ঢাকা পোস্ট : নারীর উন্নয়নে আপনার মন্ত্রণালয়ের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম সম্পর্কে যদি বলতেন…
ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা : নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষমতায়নের জন্য তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, সক্ষম করে গড়ে তোলা হচ্ছে।
নারীদের আর্থিকভাবেও সহায়তা করা হচ্ছে। বর্তমানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মোট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীদের সংখ্যা ৫৪ লাখ ৫৫ হাজার ১০৫ জন। জেলা পর্যায়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং এই নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য ব্র্যান্ডিংয়েরও কাজ করা হচ্ছে।
তথ্য আপা নামে আমাদের একটি প্রকল্প আছে। এই প্রকল্পে তৃণমূলের অসহায় নারীদের তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫৪ লাখ নারীকে ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য দেশে এক কোটি নারীকে ক্ষমতায়ন করা।
সামাজিক ও নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান আছে। প্রায় ২১ লাখ নারীকে ভিজিডি, মাতৃত্বকালীন এবং ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরেও অনগ্রসর নারী ও শিশু নিয়ে আমরা কাজ করছি।
এটা সত্য, এখনও আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। অনেক ক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে আছে। সেজন্য নারীদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতায়নের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি
ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, প্রতিমন্ত্রী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে সংবিধানে নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া নারীদের কল্যাণে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন আইন ও নীতি প্রণয়ন করেছে। এর মধ্যে নারী উন্নয়ন নীতি, শিশু উন্নয়ন নীতি ও শিশু অধিকার আইন উল্লেখযোগ্য। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন অনেক আগেই করা হয়েছে। সারা বাংলাদেশে কিশোর-কিশোরী ক্লাব আছে। এসব ক্লাবের মাধ্যমে তাদের সামাজিকভাবে সচেতন করা হচ্ছে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করাসহ অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়েও তাদের সচেতন করা হচ্ছে। এমনকি করোনার সময় অনলাইনে তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে, তাদের পিতা-মাতার সঙ্গেও কথা হচ্ছে।
ঢাকা পোস্ট : বিভিন্ন সূচকে নারীদের সমঅধিকার নিশ্চিত হলেও আর্থিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে তারা এখনও পিছিয়ে আছেন। এর পেছনের কারণ কী বলে মনে করেন?
ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা : এটা সত্য, এখনও আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। অনেক ক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে আছে। সেজন্য নারীদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতায়নের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। ইতোমধ্যে তা আমি বলে দিয়েছি। একটা মেয়ে কখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়? ওই মেয়ে যদি শিক্ষিত হয় তাহলে সে একটি চাকরি বা কোনো কিছু করতে পারে। আমাদের দেশে নারী শিক্ষার হার এ রকম ছিল না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পরই মেয়ে শিক্ষার্থীদের হার ছেলেদের তুলনায় অনেক বেড়েছে, বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে।
শুধু সরকার একাই কিন্তু সবকিছু করতে পারে না, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। এখানে নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন, সমঅধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য আগে মানুষের মন ও মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে
ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, প্রতিমন্ত্রী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়
শুধু সরকার একাই কিন্তু সবকিছু করতে পারে না, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। এখানে নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন, সমঅধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য আগে মানুষের মন ও মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। সেটা করার জন্য আমাদের সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম আমরা শুরু করেছি। এর বাইরে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তাদের যেসব উপকরণ দরকার তাও দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে রোল মডেল সৃষ্টি করেছে।
ঢাকা পোস্ট : অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও মাঠ প্রশাসনে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা : বাংলাদেশে এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে নারীরা তাদের যোগ্যতা অনুসারে পুরুষদের সঙ্গে কাজ করছে না। দেশের সার্বিক উন্নয়নে নারীরা সহযোগিতা করছে। প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা নারী, উপনেতা নারী, সিনিয়র সচিব নারী। বাংলাদেশে মেজর জেনারেল পদেও নারীরা আছেন।
নারীরা এখন বিমান চালাচ্ছেন, মিশনেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নারীরা কি-না করছে, সবকিছু করছে। নারীরা বেশি সুযোগ পায় না, তাদের যদি সমান সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে পুরুষের সঙ্গে সমানতালে কাজ করে যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষের চাইতেও বেশি যোগ্যতা নিয়ে নারীরা কাজ করছেন।
এসএইচআর/এসকেডি/এমএআর/এফআর