সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন বলেছেন, মত প্রকাশের অধিকার রক্ষার জন্য নাগরিকদের লড়াই করতে হবে। জনগণ কোনো কিছু আদায় করতে চাইলে সেটা যে সম্ভব তা বিএনপির সাম্প্রতিক সমাবেশ প্রমাণ করে। জনগণ নেমেছে বলেই সরকার আটকাতে পারেনি।

তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কোনো আইন নয়। এটা কোনো ধরনের আইনের মধ্যেই পড়ে না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে চ্যালেঞ্জ করে কেন আদালতে মামলা করা হচ্ছে না। সাংবিধানিক স্বাধীনতা যেগুলো আছে সেগুলোকে ব্যবহার করে লড়াই চালাতে হবে। অসাংবিধানিক আইনগুলো যথাযথভাবে চ্যালেঞ্জ করা উচিত।

সোমবার (১২ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের (এফবিএস) আয়োজনে ‘বাংলাদেশে মত প্রকাশের অধিকার : কতটুকু? কার জন্য?’ শীর্ষক বিশেষ ওয়েবিনারে তিনি এ কথা বলেন। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ফ্রাই ইউনির্ভাসিটি ব্রাসেলসের গবেষক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক ড. সাইমুম পারভেজ।

ড. সাইমুম পারভেজ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হিসেব দেখিয়ে বলেন, ২০২১ সালের ১১ জুলাই পর্যন্ত ৪৩৩ জনকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর অধীনে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। ১৩০০ মামলা দায়ের এবং ১০০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিজিএস’র একটি রিপোর্ট উদ্বৃত করে তিনি দেখান, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিএসএ তে ৮৯০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ২২৪৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সমাজের সব স্তরের মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। প্রবন্ধে সাম্প্রতিক কিছু প্রবণতা তুলে ধরে বলেন, প্রথম প্রবণতা হচ্ছে, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। দ্বিতীয় প্রবণতা হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ শুধু বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, বেসরকারি চাকরিজীবী ইত্যাদি সমাজের সব মানুষকে ভুক্তভোগী করে তুলছে। তৃতীয় প্রবণতা হচ্ছে ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই মূলত ১৮-৪০ বছর বয়সী। এমনকি ১৮ বছরের কম বয়সীরাও অভিযুক্ত হচ্ছেন। চতুর্থ প্রবণতা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর চেয়ে রাজনৈতিক কর্মীরা এ আইনের মাধ্যমে বেশি দমনকারী হয়ে উঠছে। 

বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল তার বক্তব্যে বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতার হরণ কেবল এই আমলেই হচ্ছে তা নয়, বরং আগের আমলগুলোতেও হয়েছে।

প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, বিদেশে যেসব সাংবাদিক সক্রিয় রয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপরও রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন শুরু হয়েছে।

জেডএস