ঢাকার কেরানীগঞ্জে চলন্ত বাস থেকে বাকপ্রতিবন্ধী এক নারী যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ‘এন মল্লিক’ পরিবহনের চালক ও হেলপারকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব)। টাকা না থাকার বিষয়টি বাকপ্রতিবন্ধী ওই নারী হেলপারকে কাগজে লিখে জানায়। তারপরেও হেলপার নাহিদ বাসচালক সবুজের যোগসাজশে ওই নারীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।

মঙ্গলবার (৯ মার্চ) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ। এ ঘটনায় বাসটি জব্দ করেছে র‍্যাব-১০ এর একটি দল।

আশিক বিল্লাহ বলেন, বাকপ্রতিবন্ধী ওই নারীকে বাস থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ঘটনাটি মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। বাকপ্রতিবন্ধী ওই নারীকে যে পাশবিক নির্যাতন করে ফেলে দেওয়া হয়েছে তা সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করেছে। পরে ঘটনাটি র‍্যাবের সাইবার ইউনিটের নজরে আসলে র‍্যাবের গোয়েন্দা ও র‍্যাব-১০ এর একটি টিম বাসের হেলপার ও চালককে আটকের জন্য অভিযান পরিচালনা করে।

পরে র‍্যাব-১০ এর একটি দল মঙ্গলবার (৯ মার্চ) দিবাগত রাত ১টা ২২ মিনিটে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ধলেশ্বরের কুচিয়ামারা এলাকা থেকে বাসচালক মো. সবুজ (২৫) ও হেলপার মো. নাহিদকে (১৯) আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, নগদ ৮০০ টাকা ও একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স (হালকা যানবাহন) জব্দ করা হয়। এ সময় বাসটিও জব্দ করা হয়।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানিয়েছে যে বাকপ্রতিবন্ধী ওই নারী কেরানীগঞ্জের কোনাখোলা এলাকা থেকে বাসে ওঠেন। পরে তার কাছে হেলপার ভাড়া চাইলে তিনি তাকে কাগজে কলমে লিখে জানান যে তার কাছে পর্যাপ্ত টাকা নেই। এই কথা শোনে হেলপার ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নারীর সঙ্গে তর্কাতর্কি করেন। ওই নারীর সঙ্গে এমন আচরণ করতে দেখে বাসের অন্য যাত্রীরাও হেলপারকে বাধা দেয়। কিন্তু সে কারোর কথা শুনে এক পর্যায়ে চালকের নির্দেশে ওই নারীকে চলন্ত বাস থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়।

পরে স্থানীয়রা ওই নারীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। এ ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করেছেন বাকপ্রতিবন্ধী নারীর এক স্বজন।

তিনি আরও বলেন, আমরা তদন্তে জানতে পারি ওই নারী এন মল্লিক পরিবহনের নিয়মিত যাত্রী ছিলেন। পরিবহনের একজন কর্মকর্তা বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় ওই নারীর জন্য ভাড়া শিথিল করেছিলেন। 

চালক ও হেলপার কি পালিয়ে গিয়েছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনার পর চালক ও হেলপার স্বাভাবিকই ছিলেন। কিন্তু ঘটনাটি ভাইরাল হওয়ায় তারা পালিয়ে যায়। পরে তাদের আটক করা হয়।

এন মল্লিক পরিবহনের বিরুদ্ধে এমন নির্যাতনের আরও অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এই র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা জানি। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।

চালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে র‍্যাব কি পদক্ষেপ নেবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাড়া নিয়ে বিরোধের জেরে বাস থেকে বাকপ্রতিবন্ধী নারীকে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত বাসচালক সবুজ মিয়ার ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিলের আবেদন করা হবে। এছাড়াও বাসটির রুট পারমিট যাচাইয়ে বিআরটিএতে চিঠি দেওয়া হবে। চালক সবুজের ড্রাইভিং লাইসেন্স হালকা যানের থাকলেও ভারি যান (বাস) চালাতো বলে জানান তিনি।

এমএসি/ওএফ