করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্ট মহামারিতে দেশের ৬২ শতাংশ শ্রমিকের মজুরি কমেছে। একই সঙ্গে কর্ম হারিয়েছেন ৭.৯ শতাংশ শ্রমিক। বুধবার (১০ মার্চ) ‘কর্মসংস্থান ও অভিবাসনের ওপর মহামারির প্রভাব: সানেমের জরিপের ফলাফল’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এ তথ্য জানানো হয়। জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা।

ওয়েবিনারটি পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পওতিয়ানেন, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ড. তাসনিম সিদ্দিকী এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, কর্মসংস্থান ও অভিবাসনের ওপর করোনা মহামারির প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পেতে সানেম ২০২১ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে খানা পর্যায়ে জরিপটি পরিচালনা করে। মোবাইল ফোন কলের মাধ্যমে পরিচালিত এই জরিপে ২৭৩ জন প্রবাসী শ্রমিক, ২৩০ জন দেশের মধ্যে অন্যত্র কাজের জন্য স্থানান্তরিত কর্মী বা শ্রমিক এবং দেশ বা দেশের বাইরে কাজের জন্য স্থানান্তরিত নন এমন ২ হাজার ৮৪৫ জন কর্মী বা শ্রমিকের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।

জরিপে তথ্য অনুযায়ী, বেতন বা মজুরির বিনিময়ে যারা কাজ করেন এমন ৬২ শতাংশ কর্মী বা শ্রমিক জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে তাদের বেতন ২০১৯ সালের তুলনায় ৭.৯ শতাংশ কমে। এ সময়ে কাজ হারিয়েছেন ও এখন পর্যন্ত (জরিপ চলাকালীন সময়) কাজ ফিরে পাননি, ১.৭ শতাংশ শ্রমিক। ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর মাসে সাময়িকভাবে কাজ হারিয়েছিলেন ৫.৪ শতাংশ।

মজুরির বিনিময়ে কাজ করেন এমন ৭ শতাংশ পুরুষ জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর মাসে তারা কাজ হারিয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত তারা কাজে যোগ দিতে পারেননি, নারীদের ক্ষেত্রে এ হার ১৬ শতাংশ।

কৃষিখাতে বেতন বা মজুরির বিনিময়ে কাজ করেন এমন ৬৮ শতাংশ জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়কালে ২০১৯ সালের তুলনায় তাদের আয় কমেছে।  তৈরি পোশাক খাতের জন্য এ হার ৬৯ শতাংশ, তৈরি পোশাক ব্যতীত অন্যান্য ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের জন্য এই হার ৫৮ শতাংশ, নির্মাণ খাতের জন্য ৭৪ শতাংশ, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায় ৫৭ শতাংশ এবং পরিবহন খাতের ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন তাদের বেতন বা মজুরি এ সময়কালে কমে গেছে।

বেতন বা মজুরির বিনিময়ে কাজ করেন এমন ৩৮ শতাংশ কর্মজীবী জানিয়েছেন, গত বছরের মার্চ-ডিসেম্বরের সময়কালে তাদের বেতন কমেনি, ২৮ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের বেতন বা মজুরি কমেছিল।

জরিপে উল্লেখ করা হয়, ২০ শতাংশ প্রবাসী শ্রমিক ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়কালের মধ্যে কাজ হারিয়েছেন। প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে ৫ শতাংশ বিভিন্ন কারণে দেশে ফিরে এসেছেন।

ড. সেলিম রায়হান বলেন, কভিডের আগেও, জীবিকার জন্য অভ্যন্তরীণ অভিবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু অভ্যন্তরীণ অভিবাসন কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাব প্রকাশ করছে। পুঁজিবাজার এবং শ্রম বাজার নিয়ে দুর্বল নীতি বা নীতির অনুপস্থিতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের ওপর প্রভাব ফেলবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর আলোচনায় বলেন, এটা ইতিবাচক যে লোকজন ধীরে ধীরে কাজে ফিরে যাচ্ছে, কিন্তু যদি নতুন বিনিয়োগ না হয়, তাহলে শ্রমশক্তিতে যোগ দেয়া নতুন মানুষদের আমরা কীভাবে জায়গা দেবো? যেখানে আমরা আগে থেকেই বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য এখনও তেমন কিছু করতে পারিনি? 

আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পওতিয়ানেন বলেন, এই আলোচনায় সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যুগুলো পরিস্কারভাবে উঠে এসেছে। সামাজিক নিরাপত্তার নিমিত্তে একটি সার্বিক ও বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে। 

এসআই/এসকেডি