প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের নতুন এক প্রজাতি বা স্ট্রেইন ‘এন৫০১ওয়াই’ শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশে। যুক্তরাজ্য ফেরত প্রবাসীদের মধ্যে ৬ জনের শরীরে এই স্ট্রেইন শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই বাংলাদেশে সংক্রমণটি ধরা পড়েছে। যুক্তরাজ্যে এই ধরনটিই খুব দ্রুত সংক্রমণ হচ্ছে। বুধবার (১০ মার্চ) আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এস এম আলমগীর ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ড. আলমগীর বলেন, ‘জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আমরা যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি নতুন ধরন শনাক্ত করি। সে দেশে যে ধরনটি সংক্রমিত করছে, আমাদের শনাক্ত করা ধরনটিও হুবহু ছিল। তারপর শনাক্ত হওয়াদের আমরা তত্ত্বাবধানে রাখি। তাদের আমরা আইসোলেশনে রেখেছি। তবে যুক্তরাজ্যের মতো আমাদের এখানে এত স্প্রেডিং পাইনি।’

তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর ৮০টি দেশে যুক্তরাজ্যের স্ট্রেইনটি দেখা গেছে। এর কারণে বহু দেশে সংক্রমণ যে বেশি হয়েছে, বিষয়টি এমন না। যুক্তরাজ্যের মতো সংক্রমণ কোথাও হয়নি। স্ট্রেইনটি আমাদের এই অঞ্চলে সে রকম স্প্রেডিং ক্যাপাসিটি অর্জন করেনি বলেই আমাদের ধারণা।’

নতুন ধরনটি দেশে ছড়ানোর বিষয়ে কোনো গবেষণা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্য থেকে যারা আসছে তাদের প্রত্যেককে পরীক্ষা করে যাদের পজিটিভ আসছে, তাদের স্যাম্পল সিকুয়েন্সিং করছি। এটা করেই আমরা কয়েকটি পেয়েছি। সেটা অব্যাহত রয়েছে। কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করে যাদের কন্ট্রাক্টে এসেছে তাদের ফলোআপে ১৪ দিন রেখে আমরা রেপিডেট টেস্ট করিয়েছি। তেমন কিছু পাইনি। আমরা এই ভেরিয়েন্টটির সংক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম হয়েছি।’

যুক্তরাজ্য ফেরতদের নমুনা সাত দিন পরপর পরীক্ষা করা হয় জানিয়ে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ‘যারই পজিটিভ পাওয়া যায়, তারই সিকুয়েন্সিং করছি। নতুন ভেরিয়েন্ট পাওয়া গেলে কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি। কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করে নিয়মিত ফলোআপ করছি। টোটাল ৬ জনের মধ্যে পেয়েছি। তারা সবাই যুক্তরাজ্য থেকে ফেরা। তারা ঢাকায় ও সিলেটে অবস্থান করছেন।’

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, যে কোনো সংক্রামক ব্যাধি এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে পারে। তার জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী পদক্ষেপগুলো জোর দিয়ে অনুসরণ করতে হবে। বিশেষ করে বন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, সংক্রমণ নিয়ে আসতে পারে এমন লোকদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা এবং স্থল, নৌ, বিমানবন্দরগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। দেশের ভেতরে যদি সংক্রমণ হয়, সেটা শনাক্তকরণের ব্যবস্থা রাখা, সেগুলোর সার্ভিলেন্সের ব্যবস্থা রাখা, এগুলো জোর দিয়ে করতে হবে।

নতুন প্রজাতিটি দ্রুত সংক্রামক কি না ও অ্যান্টিবডি থাকলেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে কি না জানতে চাইলে মুশতাক হোসেন বলেন, এগুলো নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা হচ্ছে। আমরা এই তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করব, আমাদেরটা অন্যরা করবে, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। বিভিন্ন জায়গায় নতুন প্রজাতির ভেরিয়েন্ট দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে এবং টিকাগুলোকেও আরও উন্নতকরণ করা হচ্ছে যাতে নতুন কোন প্রজাতি টিকাকে ব্যর্থ করতে না পারে।

এই প্রসঙ্গে ড. আলমগীর বলেন, বাংলাদেশে যে ভ্যাকসিন দিচ্ছি এতে করোনার নতুন ধরন তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। আমরা যে ভ্যাকসিন দিচ্ছি, ব্রিটেনেও সেটা ব্যাপক হারে দেওয়া হচ্ছে। ভ্যাকসিন যথাযথভাবেই কার্যকর রয়েছে, বলেন তিনি।

নতুন ধরন নিয়ে বড় পরিসরে গবেষণার পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রথম কাজ হলো, ‘বাংলাদেশে ঢুকছে কি না? আমরা সেটা করে যাদের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে, সেটা শনাক্ত করে কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

এখন দেশে সংক্রমণ বাড়ছে, এতে যুক্তরাজ্যের ভেরিয়েন্টের কোনো প্রভাব নেই বলেও জানান এই কর্মকর্তা। বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানছি না, যে কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি সবাইকে মানতে হবে।’

যুক্তরাজ্যে করোনার নতুন ধরনটি শনাক্ত হয় ২০২০ সালের নভেম্বরে। এটি ৪০ থেকে ৮০ শতাংশ বেশি সংক্রামক বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

টিআই/জেডএস/এমএমজে