১১টায় পরীক্ষা বন্ধ, ভোগান্তিতে ক্যান্সার রোগীরা
এক পরীক্ষার জন্য তিনবার লাইন ধরতে হয়। আবার পরীক্ষার রিপোর্ট মেলে তিন থেকে পাঁচদিন পর। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানো, থাকা এবং খাওয়া-দাওয়া নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রোগীরা।
ভোগান্তির কারণ সম্পর্কে মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের অভিযোগ, বেলা ১১টার পর পরীক্ষা হয় না। তবে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, সক্ষমতার চেয়ে রোগীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। আমাদের ডাক্তারসহ যে পরিমাণ লোকবল রয়েছে, তা দিয়ে হাসপাতালে সেবাপ্রত্যাশী সবাইকে সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আধাবেলা পরীক্ষা, বাকি সময় স্যাম্পলিং, রিপোর্ট তৈরির কাজ করতে হয়।
বিজ্ঞাপন
ঢাকায় থাকার কোনো জায়গা নেই। রোববার ১০টায় এসে লাইনে দাঁড়াই টিকিটের জন্য। প্রায় ৫০ জনের পর সিরিয়াল ছিল। টিকিট নেওয়ার পর পরীক্ষার জন্য প্রেসক্রিপশন, কাগজপত্র জমা দিতে পারিনি। ততক্ষণে ১১টা বেজে যায়। রোগীদের পরীক্ষার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরদিন (সোমবার) সকালে দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট জমা দেই। কিন্তু ততক্ষণে ডাক্তার চলে যান। আজ আবারও সকাল থেকে রোগী নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছি। কপালে কী আছে দেখি
ভুক্তভোগী রোগীর স্বজন
বুধবার (১০ মার্চ) সকাল ১০টায় জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়ে কথা হয় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থেকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে আসা রিপন মানিকের সঙ্গে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘তিনদিন ধরে হাসপাতালে ঘুরতেছি, পরীক্ষা করতে পারতেছি না। আমরা খুব বিপদে আছি, কিছু একটা করেন।’
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় থাকার কোনো জায়গা নেই। রোববার ১০টায় এসে লাইনে দাঁড়াই টিকিটের জন্য। প্রায় ৫০ জনের পর সিরিয়াল ছিল। টিকিট নেওয়ার পর পরীক্ষার জন্য প্রেসক্রিপশন, কাগজপত্র জমা দিতে পারিনি। ততক্ষণে ১১টা বেজে যায়। রোগীদের পরীক্ষার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরদিন (সোমবার) সকালে দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট জমা দেই। কিন্তু ততক্ষণে ডাক্তার চলে যান। আজ আবারও সকাল থেকে রোগী নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছি। কপালে কী আছে দেখি!’
আম্মু ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগী। চিকিৎসা চলছে। কিন্তু দিন দিন অবনতি হচ্ছে। আজ আল্ট্রাসনোগ্রামসহ দুটি টেস্টের টিকিটের জন্য সকাল ৭টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে সোয়া ৮টার দিকে টিকিট পেয়েছি। টিকিটসহ দুটি টেস্টের জন্য ৬৫০ টাকা জমা দিয়েছি ১০৬ নম্বর রুমে। পরে ১০৩ নম্বর রুমের সামনে দাঁড়িয়েছি সকাল সাড়ে ৮টা থেকে। এখন বাজে সাড়ে ১০টা। বলতেছে, আরও ৪২ জনের পর পরীক্ষা হবে। আজ করতে পারব কি না, বুঝতে পারছি না
ভুক্তভোগী রোগীর স্বজন
বাবাকে নিয়ে হাসপাতালের ফ্লোরে অবস্থান করছিলেন ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী আমানুর রহমান রোপন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেলে চারদিন ঘুরেছি। তারা ক্যান্সার হাসপাতালে রেফার করেছে। এখানে চিকিৎসার জন্য ৪ মার্চ থেকে ঘুরতেছি। কিন্তু ভর্তি নিচ্ছে না। হাসপাতালের বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখিয়েছি। এক্সরে, সিটি স্ক্যানসহ চারটি পরীক্ষা দিয়েছে। এগুলো করেছি পাঁচদিনে। কিন্তু এখনও রিপোর্ট হাতে পাইনি। এই পাঁচদিন হাসপাতালে মা-বাবাকে নিয়ে আছি। খাওয়া-দাওয়া কিংবা ঘুম কিছুই ঠিক মতো হয়নি।’
মানিকগঞ্জ থেকে আসা রোগী রওশনারা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আল্ট্রাসনোগ্রামের রিপোর্ট পেয়েছি তিনদিন পর। একদিনে ডাক্তার দেখানো যায় না। আশপাশে থাকা-খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই কোনো আত্মীয়-স্বজনও।
নেত্রকোনা থেকে মাকে নিয়ে হাসপাতালে আসা আমান উল্লাহ বলেন, ‘আম্মু ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগী। চিকিৎসা চলছে। কিন্তু দিন দিন অবনতি হচ্ছে। আজ আল্ট্রাসনোগ্রামসহ দুটি টেস্টের টিকিটের জন্য সকাল ৭টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে সোয়া ৮টার দিকে টিকিট পেয়েছি। টিকিটসহ দুটি টেস্টের জন্য ৬৫০ টাকা জমা দিয়েছি ১০৬ নম্বর রুমে। পরে ১০৩ নম্বর রুমের সামনে দাঁড়িয়েছি সকাল সাড়ে ৮টা থেকে। এখন বাজে সাড়ে ১০টা। বলতেছে, আরও ৪২ জনের পর পরীক্ষা হবে। আজ করতে পারব কি না, বুঝতে পারছি না।’
আমাদের সক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রোগী আসায় এক বেলা সেবা দিচ্ছি। এক বেলার পরীক্ষার রিপোর্ট দেওয়ারই লোকবল নেই। আমরা মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দিয়েছি যাতে আমাদের সক্ষমতা বাড়ানো হয়। পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগে যেন ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়
অধ্যাপক ডা. কাজী মুশতাক হোসেন, পরিচালক, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
হাসপাতাল সূত্র জানায়, স্বল্প দামে প্লেইন এক্স-রে প্রতি ভিউ, জয়েন্ট এক্স-রে দুই ভিউ, কন্ট্রাস্ট এক্স-রে, আইভিইউ, আরজিএম এবং বেরিয়াম মেইল এক্স-রে করা হয় হাসপাতালটিতে। সিটি স্ক্যান সেবার মধ্যে রয়েছে- ব্রেন, চেস্ট এবং এইচবিসি-আপার সিটি স্ক্যান।
এমআরআই স্ক্যান সেবার মধ্যে রয়েছে- ব্রেন, স্পাইন, স্টমাক, নেক এবং সব কন্ট্রাস্ট এমআরআই। এছাড়া রয়েছে ম্যামোগ্রাফি সিঙ্গেল, ম্যামোগ্রাফি ডাবল এবং আল্ট্রাসনোগ্রাম হোল অ্যাবডোমেন ও উভয় ব্রেস্ট।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী মুশতাক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৩০০ রোগীর এ হাসপাতালে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ৪৪ হাজার ৪১১ জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্যাথলজি বিভাগে দুই হাজার ৫০৬ রোগীর আট হাজার ৬৮৪টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রোগী আসায় এক বেলা সেবা দিচ্ছি। এক বেলার পরীক্ষার রিপোর্ট দেওয়ারই লোকবল নেই। আমরা মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দিয়েছি যাতে আমাদের সক্ষমতা বাড়ানো হয়। পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগে যেন ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়।’
এমআই/এইচকে/এমএআর/এমএমজে