পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোখলেসুর রহমানের স্ত্রীর অবৈধ সম্পদের খোঁজে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকসহ চার প্রতিষ্ঠানে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিক স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হয়েছে। চাহিদা করা নথিপত্র আগামী ১৬ মার্চের মধ্যে পাঠানোর অনুরোধ করেছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা।সংস্থাটির জনসংযোগ দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, অতিরিক্ত ডিআইজি মোখলেসুর রহমানের স্ত্রী শরীফা বেগমের নামে থাকা বিভিন্ন সম্পদের তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। এর মধ্যে রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে রাজধানীর বাড্ডা পুর্নবাসন এলাকার ৪ নং রোডের ২৪ নম্বর প্লট সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চাওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের গুলশান ও বিজয় নগর শাখার ম্যানেজার বরাবর পাঠানো চিঠিতে শান্তিনগরের ১৪/এ ফ্ল্যাট কেনার ভাউচার ও চেকসহ সংশ্লিষ্ট নথি চাওয়া হয়েছে।

এছাড়া নেপচুন ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের এমডিকে পাঠানো অপর চিঠিতে বাড্ডার সাতারকূলের ৩০৭ নম্বর রোডের সেক্টর তিন নম্বরে থাকা ৫ কাঠা জমির দলিলসহ অন্যান্য রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি মোখলেসুর দম্পতি সম্পদের বিবরণ দুদক সচিবের কাছে দেন। এর পরপরই দুদক উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিককে সম্পদের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে নিয়োগ দেয় কমিশন।

মোখলেসুর ও মনি দম্পতির বিষয়ে দুদকসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মোখলেসুর রহমান ১৯৯৫ সালে নেত্রকোনার ফজলুর রহমান ও হোসনে আরা বেগমের মেয়ে শরীফা বেগম মনিকে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান রয়েছে। ছেলে মুনতাসির রহমান মুঞ্জ খুলনা প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে ও মেয়ে মাইশা বাশিদা মাইমা ভিকারুননিসা কলেজে পড়েন। স্ত্রী শরীফা বেগম মনি একজন গৃহিণী। তার স্বামী-স্ত্রী দুজনই আয়কর দাতা। স্ত্রী মনি ২০০৮ সাল আয়কর নথি চালু করেন। আর মোখলেসুরের আয়কর নথি চালু হয় ৯০ দশকে।

দুদকের অনুসন্ধানে অতিরিক্ত ডিআইজি মোখলেসুর রহমানের নামে ৪৫ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪৬ টাকার স্থাবর এবং ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৩ টাকার অস্থাবরসহ মোট ৫৯ লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। অন্যদিকে তার স্ত্রী মনির নামে এক কোটি ৪৪ লাখ ১৩ হাজার টাকার স্থাবর এবং এক কোটি ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৮০ টাকার অস্থাবরসহ মোট ২ কোটি ৫৮ হাজার ৭ হাজার টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে তাদের নামে ৩ কোটি ১৮ লাখ সাড়ে তিন হাজার টাকার সম্পদের খোঁজ মিলেছে। যদিও বাস্তবে তাদের নামে থাকা সম্পদের মূল্য কয়েকগুণ বেশি বলে জানা যায়।

নিজের ও স্ত্রীর নামে সম্পদের বৈধতা পেতে আয়ের উৎস দেখিয়েছেন, নারীদের পোশাক বিক্রি, সঞ্চয়পত্রের সুদ, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ, আগের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরির বেতন, উত্তরাধিকার এবং লন্ডনে কর্মরত ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদের সত্যতা পাওয়ায় রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে কর্মরত অতিরিক্ত ডিআইজি মোখলেসুর রহমান ও তার কোটিপতি স্ত্রীর কাছে সম্পদের হিসাব চান দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ। স্ত্রীর নামে যত সম্পদের বিবরণী পাওয়া গেছে সবই প্রকৃতপক্ষে মোখলেসুর রহমানের। কারণ, তিনি সব সম্পদের মালিক হয়েছেন বিয়ের পর। এছাড়া দুদকের অনুসন্ধানে আরও সম্পদের খোঁজ মিলেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, স্ত্রী শরীফা বেগম মনি ২০১০ সালের ৩০ জুন কক্সবাজারে কলাতলীর সায়মন বিচ রিসোর্টে ৪৭৫ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছেন। রেজিস্ট্রেশন সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ১১ এপ্রিল ঢাকার শান্তিনগরে শেলটেক রহমান ভিলায় কার পার্কিংসহ ২৩৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কেনেন তিনি। নিজ বাড়ি নেত্রকোনা সদরে ৩০ শতাংশ জমি কিনেছেন ২০১৩ ও ২০১৪ সালে। এছাড়া ২০১৪ সালে ২১ লাখ টাকার ১৫০০ সিসির পুরানো টয়োটা গাড়ি (রেজি নং-৩১-৪৭৯৯) কেনেন মনি।

মনির অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে, ২০১৩,২০১৫,২০১৬,২০১৭ ও ২০১৮ সালে ১০ লাখ ও ১৫ লাখ করে মোট ৭০ লাখ টাকার পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ও পরিবার সঞ্চয়পত্র। এছাড়া নিজের নামে রয়েছে ৬ লাখ ৪০ হাজার ১৮০ টাকার জীবন বিমা।

এসব সম্পদের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে মোখলেসুর রহমান ও তার স্ত্রী দুদককে জানিয়েছেন, তারা নারীদের শাড়ি ও পোশাক বিক্রির ব্যবসা থেকে অতি মুনাফা, সঞ্চয়পত্রের সুদ, শেয়ার মার্কেটের তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়, মিশম্যাক ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের সিনিয়র রিপ্রেজেনটেটিভ পদে চাকরির বেতন-ভাতা, বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার, লন্ডনে কর্মরত ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ এবং সৌদিতে কর্মরত ভাগ্নের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত ডিআইজি মোখলেসুর রহমানের অফিসিয়াল ফোন নম্বরে কয়েকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

আরএম/জেডএস