রাজধানীতে গিফট দেয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে দুই বিদেশি নাগরিকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার রাত ১টায় রাজধানীর উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের একটি বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করে ডিএমপি গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।  এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৪টি মোবাইল ফোন, নগদ ৩ লাখ টাকা ও ৩০০ ডলার জব্দ করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- আরিফা সুলতানা সিমু, অ্যাঙ্গোলার নাগরিক উইলসন দা কনসিয়াকো ও ক্যামেরুনের নগনো নগদো।

বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের ইনচার্জ অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মহিদুল ইসলাম বলেন, আরিফা সুলতানা সিমুর স্বামী ইভাস পাসকেল পঙ্গডু অনলাইন প্রতারক চক্রের মূলহোতা। তিনি ফ্রান্সে বসে এ চক্রটি পরিচালনা করেন। গত বছরের নভেম্বরে ইভাস পাসকেল পঙ্গডু নিজেকে আমেরিকান সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট নার্স পরিচয় দিয়ে ভিকটিমের সঙ্গে প্রথমে ইনস্টাগ্রমে পরিচিত হন। তাদের মধ্যে নিয়মিত হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা আদান-প্রদান হত। একদিন ভিকটিমকে বলেন, আফগানিস্তানে কাজ করা অবস্থায় একটি বাক্স কুড়িয়ে পেয়েছেন তিনি। যেখানে বিপুল পরিমাণ ডলার পাওয়া গেছে। এমনকি ভিকটিমকে হোয়াটসঅ্যাপে কুড়িয়ে পাওয়া ডলারের ভুয়া ছবিও দেখান পঙ্গডু। এসব দেখে ভিকটিম সহজেই বিষয়টি বিশ্বাস করেন। ভিকটিমকে পঙ্গডু বলেন, তিনি এসব ডলার নেবেন না। কুড়িয়ে পাওয়া ডলার গরিব কোনো দেশে পাঠিয়ে দিতে চান। একপর্যায়ে তিনি এসব ডলার নেওয়ার প্রস্তাব ভিকটিমকে দেন। প্রস্তাবে ভিকটিম রাজি হয়ে যান। পরে একটি আন্তর্জাতিক এজেন্সির নকল রশিদের ছবি ভিকটিমকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে বলেন, পার্সেলটি কুরিয়ার করা হয়েছে। ছবি পাঠানোর দু-তিন দিন পর আরিফা সুলতানা সিমু নিজেকে কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে ভিকটিমকে ফোন করে বলেন, আপনার একটি পার্সেল এসেছে। পার্সেলটি নিতে আপনাকে ৬৫ হাজার টাকা দিতে হবে। তখন ভিকটিম সিমুকে বলেন, কাস্টম ফি তো যিনি পার্সেলটি পাঠিয়েছেন তিনি দেওয়ার কথা। কিন্তু সিমু ভিকটিমকে বলেন, ওই দেশ থেকে বাংলাদেশের কাস্টমস ফি দেওয়ার সুযোগ নেই। ভিকটিমকেই টাকা দিয়ে পার্সেল নিতে হবে। এ কথা শুনে ভিকটিম সিমুর দেওয়া এবি ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে ৬৫ হাজার টাকা পাঠান।

ডিবির এ অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, ভিকটিম টাকা পাঠানোর পরে সিমু তার ফোন নাম্বারটি বন্ধ করে দেন। টানা দুই থেকে তিন দিন চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে পঙ্গডুর সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করে জানান, তিনি পার্সেলটি পাননি। ভিকটিমের এ কথা শুনে সার্জেন্ট নার্স তাকে একটি বিদেশী নাম্বার দিয়ে বলেন, ওই ব্যক্তি একজন ডিপ্লোমেটিক এজেন্ট। পার্সেলের বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। নার্সের দেওয়া নাম্বারে যোগাযোগ করলে ডিপ্লোমেটিক এজেন্ট পরিচয়দানকারী ব্যক্তি ভিকটিমকে বলেন, পার্সেলটা পাঠাতে ভুল হয়েছে। এটি ঢাকার পরবর্তীতে সিলেটে পৌঁছে গেছে। এছাড়া পার্সেলে থাকা ডলার কাস্টমসের কাছে ধরা পড়েছে। এখন এই পার্সেলটি নিতে হলে কাস্টমস এবং কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের ক্লিয়ারেন্স লাগবে। এ জন্য ভিকটিমকে ঘুষ দিতে হবে। এসব ক্লিয়ারেন্সের কথা বলে ডিপ্লোমেটিক এজেন্ট পরিচয়দানকারী ব্যক্তি ভিকটিমের কাছ থেকে ৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।

মহিদুল ইসলাম বলেন, পরে ভিকটিম তার বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় গত বছরের ৫ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।

এমএসি/এসকেডি