‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর আত্মীয়স্বজন এবং তাকে যারা চেয়ারম্যান বানিয়েছেন- তারা সবাই নদী দখলদার। এসব দখলদারকে আড়াল করতে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে নদী দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হলেও সেটি বাতিল করে দিয়েছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

সম্প্রতি রাজধানীর ডিআরইউতে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তব্য দিতে গিয়ে কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান হাওলাদার এমন অভিযোগ তোলেন।

মুজিবর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘কমিশন থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এবং দেশের আইন মেনে দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান ওই তালিকা প্রকাশ না করে পুনর্মূল্যায়নের নামে তালিকা থেকে অনেক দখলদারের নাম বাদ দিতে চান। দখলদারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য আর্থিক সুবিধা নেওয়ার কথাও আমরা শুনতে পাচ্ছি।’

মুজিবর রহমান হাওলাদার বলেন, সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী আমাকে একদিন বললেন, ‘আপনার মাঠপর্যায়ে গিয়ে তালিকা করার দরকার নাই। ঢাকায় বসে কাজ করলেই চলবে।’ কিন্তু আমি ওই মন্ত্রীর এলাকায় গিয়ে দেখি তার বাবার আমল থেকে দুটি শিল্পকারখানা নদী দখল করে চালানো হচ্ছে। 

তিনি বলেন, অনেক সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী নেতা নদী দখল করে আছেন। তাদের নাম বাদ দিতে বর্তমান চেয়ারম্যান দখলদারদের তালিকা সংশোধন করছেন।

নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, দেশে নদী যে দখল ও দূষণের শিকার হচ্ছে, তা বুঝতে বিজ্ঞান ও গবেষণার দরকার হয় না। নদীর পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেও বোঝা যায়। নদী রক্ষা কমিশনের কাজ ছিল ইতোমধ্যে চিহ্নিত হওয়া দখলদারদের উচ্ছেদে উদ্যোগ নেওয়া। যাদের নদী দখলদারদের তালিকা যাচাই–বাছাই করার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, তাদের সম্পদের হিসাব নিলে ওই তালিকা সংশোধনের আসল কারণ বেরিয়ে আসবে।

শুধু তাই নয়, নিয়োগপত্রের শর্তও তিনি রাখেননি অভিযোগ তুলে বলা হয়েছে, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন ২০১৩ এর ধারা ৫(২) এবং একই আইনের ধারা ৫(৩) অনুযায়ী ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্ম সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে নিয়োগ দেওয়া হলে তিনি সেই স্বর্ত ভঙ্গ করে নদী দখল করে আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। অন্যদিকে তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে বসার পর ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। কমিশনের সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকলেও তিনি নিজেই নির্দেশ দিয়ে লিখিত চিঠি পাঠিয়েছেন। এটি নিয়োগ বিধির লঙ্ঘন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে।  

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সাবেক চেয়ারম্যানের এসব অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একটি চক্র তাকে (সাবেক চেয়ারম্যানকে) বিভ্রান্ত করে মিথ্যা বলাচ্ছে। দখলদারদের তালিকা তৈরির প্রক্রিয়ার সঙ্গে তিনি (মুজিবর রহমান হাওলাদার) জড়িত ছিলেন না। তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর আমি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ওই তালিকা তৈরি করা হয়। কিন্তু তালিকাটিতে বেশ কিছু ভুল ও ত্রুটি ধরা পড়ায় আমরা তা সংশোধন করছি এবং জেলা প্রাসাশকদের বরাবর পাঠিয়েছি। কিন্তু আমার আত্মীয়দের তালিকা বাতিল করিনি।

এমএম/এসএম