ঢামেকের ইমার্জেন্সি, ঘড়ির সময় যেখানে অর্থহীন
দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে আছেন জোহরা বেগম/ ছবি: ঢাকা পোস্ট
ঘড়িতে বিকেল ৫টা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) জরুরি বিভাগের সামনের দেয়ালের সঙ্গে ঠেস দিয়ে বসে আছেন জোহরা বেগম। চোখে মুখে তার কান্নার ছাপ। এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন। দেখে মনে হয় কী যেন খুঁজছেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ সকালে আমার বড় ছেলে মোবারক (৪০) মাদারীপুরে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ভেতরে আছে। ৫ মাস আগে স্বামী মারা গেছে। এখন ছেলেটার এই অবস্থা। বলতে গিয়ে চোখ বেয়ে তার অশ্রু নেমে আসছিল। আর নিজের কাপড় দিয়ে তা মুছতে মুছতে বিলাপ করছিলেন।
বিজ্ঞাপন
শুধু মোবারকই নন, এরকম শতশত রোগী দেশের নানা জায়গা থেকে ঢামেকে আসেন। আর তাদের স্বজনদের আহাজারি এখানকার পরিবেশ ভারী করে তোলে। তাদের চোখে-মুখে থাকে উদ্বেগের ছাপ।
রোববার (১৪ মার্চ) সরেজমিনে ঢামেকে ঘুরে দেখা গেছে, এখানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগীরা আসেন। অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যান, আবার গুরুতর আহত হলে ভর্তি হয়ে হাসপাতালে থেকে যান। কেউ বা চিকিৎসা দেওয়ার আগেই মারা যান। এখানে ডিউটিরত ডাক্তার, নার্স, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কাছে এসব দৃশ্য বেশ পরিচিত।
বিজ্ঞাপন
ঢামেকে চিকিৎসা নিতে বরগুনার আমতলী থেকে এসেছেন দুলু ব্যাপারি। সঙ্গে এসেছেন স্বজন শ্যামল। তিনি জানান, দুলু দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল। নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। এখন সংজ্ঞা নেই। এখানে আনার পর জরুরি বিভাগ থেকে ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। সেখানে তারা বলল রোগীর অবস্থা ভালো নয়। নিতে হবে আইসিইউতে। হান্নান নামে এক দালাল মোহাম্মদপুরের ঢাকা হেলথ কেয়ারের আইসিউতে নিয়ে যেতে বলল। এমনভাবে তারা অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে যাবে, যেন ঢামেক থেকে সরকারিভাবে রেফার্ড করা হচ্ছে। কিছুই বুঝতে পারছি না।
চিকিৎসা নিতে আসা আরেক নারী ফাতেমা বলেন, আমি রিকশায় যাচ্ছিলাম। পেছন থেকে সিএনজি ধাক্কা দিলে আমি রাস্তায় পড়ে যাই। এতে আমার হাত-পা ও পিঠের চামড়া উঠে যায়। পরে আমি নিজেই ঢাকা মেডিকেলে চলে আসি। চিকিৎসা নিয়ে পরিবারের সঙ্গে চলে যাব। এখানে চিকিৎসা ভালো। কিন্তু সিরিয়ালে পড়ে থাকতে হয়। কী যে যন্ত্রণা, তা বলে শেষ করা যাবে না।
ঢামেকের ইমার্জেন্সিতে সবসময় রোগীর সিরিয়াল লেগেই থাকে। মিনিটে মিনিটে অ্যাম্বুলেন্স, সিএনজি ও রিকশায় করে রোগীরা আসেন এখানে। কখন দিন কখন রাত তার হিসেবে কেউ রাখে না। রোগী, স্বজন, চিকিৎসক, নার্স, পুলিশ ও আনসারদের কাছে এখানে সময়ের কোনো ভেদাভেদ নেই। ঘড়িতে সময় যা-ই হোক না কেন, এখানে ঘড়ির সময় যেন অর্থহীন।
আরএইচ