অমর একুশে বইমেলা।

অমর একুশে বইমেলার দশম দিনে ২৬০টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। মেলার দ্বিতীয় দিন থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ২৫টি বই মেলায় এসেছে। তুলনামূলক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নতুন বইগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে উপন্যাস ও কবিতার বই। অপরদিকে সর্বনিম্ন নতুন বইয়ের তালিকায় রয়েছে অভিধান, রম্য ও ধাঁধা।

শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপ-বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মেলার দশম দিনে নতুন গল্পের বই ৩০টি, উপন্যাস ৪৬টি, প্রবন্ধ ১৩টি, কবিতা ৭৯টি, গবেষণা ৪টি, ছড়া ৮টি, শিশুতোষ ১৮টি, জীবনী ৬টি, রচনাবলী ২টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ৩টি, নাটক ৩টি, বিজ্ঞান ১টি, ভ্রমণ ৮টি, ইতিহাস ৫টি, রাজনীতি ১টি, চিকিৎসা ১টি, বঙ্গবন্ধু ১টি, রম্য ২টি, ধর্মীয় ৩টি, অনুবাদ ২টি, সায়েন্স ফিকশন ৬টি এবং অন্যান্য ১৮টিসহ মোট ২৬০টি বই যোগ হয়েছে মেলায়।

এখন পর্যন্ত মেলায় মোট গল্পের বই ১২২টি, উপন্যাস ১৭৯টি, প্রবন্ধ ৫৫টি, কবিতা ২৯৫টি, গবেষণা ১৭টি, ছড়া ১৮টি, শিশুতোষ ৩৮টি, জীবনী ৪৩টি, রচনাবলী ৯টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ২২টি, নাটক ৯টি, বিজ্ঞান ১৬টি, ভ্রমণ ২৫টি, ইতিহাস ৩৩টি, রাজনীতি ৭টি, চিকিৎসা ৬টি, বঙ্গবন্ধু ৭টি, রম্য ৫টি, ধর্মীয় ১৩টি, অনুবাদ ১৫টি, অভিধান ২টি, সায়েন্স ফিকশন ১৪টি এবং অন্যান্য ৮৫টিসহ মোট ১ হাজার ২৫ টি বই প্রকাশ হয়েছে।

মেলার দশম দিন সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তন শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুইশতাধিক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন কাজী মদিনা, আঞ্জুমান আরা এবং নূরুল হাসনাত জিলান।

বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি। শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদ এবং জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি ও এস এম সুলতান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মলয় বালা এবং সৈয়দ নিজার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুশান্তকুমার অধিকারী, ইমাম হোসেন সুমন, নাসির আলী মামুন এবং নীরু শামসুন্নাহার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুনতাসীর মামুন।

অনুষ্ঠানে প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, বাংলাদেশের ছাপচিত্রের পথিকৃৎ এবং উপমহাদেশের স্বনামধন্য ছাপচিত্রী সফিউদ্দীন আহমেদ এদেশের শিল্প আন্দোলনের সূতিকাগার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। তিনি সফল তেলরং শিল্পী, ছাপচিত্রী এবং একজন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর শিক্ষক। জীবন ও কর্মে তার সাধনার ধরন, নিভৃতচারী স্বভাব, বিলাসবর্জিত জীবনযাপন, সততা, শুদ্ধাচার, সংগীতানুরাগ, মুক্তদৃষ্টি, ধ্যান, শিল্পসাধনা ও ব্যক্তিত্ব তার চরিত্রে জুগিয়েছে অভিনতুন মাত্রা। অপরদিকে এস এম সুলতান শুধু চিত্রশিল্পীই ছিলেন না, তার স্বতন্ত্র দর্শন, রাজনীতি, সমাজ নন্দনভাবনা ছিল। যা একই সাথে দেশজ ও সময়ের চেয়ে অগ্রগামী। সুলতান আমাদের চিন্তা ও শিল্পচর্চায় ঔপনিবেশিকতার ছাপগুলো খুঁজে বের করেছেন যা বি-উনিবেশায়নের প্রাথমিক শর্ত।

আলোচকরা বলেন, শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদ আমাদের আধুনিক শিল্পচর্চার পথিকৃতদের একজন। পরিপূর্ণ সাধক-শিল্পীর একাত্মতা নিয়েই তিনি শিল্পসাধনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। বাংলাদেশের শিল্পকলার ইতিহাস ছাপচিত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে উন্নতকরণে শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদের অবদান অনস্বীকার্য। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শিল্পী এস এম সুলতান বাংলার লোকসংস্কৃতি ও জাতিসত্তার একজন ধারক হয়ে উঠেছিলেন। কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থেকেও তিনি শিল্পচর্চার জগতে রেখে গেছেন অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর।

সভাপতির বক্তব্যে মুনতাসীর মামুন বলেন, শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদ এবং এস এম সুলতান আমাদের শিল্পকলার জগতে উজ্জ্বল দুই নক্ষত্র। সফিউদ্দীন আহমেদ প্রাতিষ্ঠানিকতার মধ্যে থেকে নিখুঁত কলাকৌশলের মাধ্যমে শিল্পচর্চা করে গেছেন। অন্যদিকে এস এম সুলতান শিল্পচর্চার দিক থেকে ছিলেন সাধারণ মানুষের কাছাকাছি, যে কারণে তার ছবির ভেতর আমরা নিজেদের খুঁজে পাই।

আজ ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মৌলি আজাদ, সাগরিকা নাসরীন, সাহাদাত পারভেজ এবং হুমায়ূন কবীর ঢালী।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন বায়তুল্লাহ কাদেরী, সঞ্জীব পুরোহিত, ফারহানা রহমান এবং রুহ রুহেল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ডালিয়া আহমেদ, নুরুজ্জামান, মাসুদ রানা, মাহমুদুল হাকিম তানভীর। এছাড়াও ছিল জিনিয়া জ্যোৎস্নার পরিচালনা নৃত্য সংগঠন জিনিয়া নৃত্যকলা একাডেমি, মনোমি তানজানার পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন নিক্কন পারফর্মিং আর্ট সেন্টার, মো. জাকির হোসেনের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন শান্তি ভাবদর্শন চর্যাকেন্দ্র, পারভীন আক্তার আঁখির পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন আনসার ডান্স একাডেমির নৃত্য পরিবেশনা। আবৃত্তি পরিবেশনা করেন বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ এবং ত্রিলোক বাচিক পাঠশালার শিল্পীরা।

এমএম/এফকে