বাঙালি ও বাংলাদেশের অস্তিত্বে ৭ মার্চের ভাষণ অনিবার্য বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) দুপুরে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ দিবস উপলক্ষে পিরোজপুর জেলা প্রশাসন আয়োজিত আলোচনা সভায় সচিবালয়স্থ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিজ দপ্তর কক্ষ থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী রেবেকা খান, সিভিল সার্জন ডা. হাসনাত ইউসুফ জাকি, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কানাই লাল বিশ্বাস, জেলা যুবলীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান ফুলু, স্থানীয় বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

এসময় তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ একটি জাতির দর্শন, একটি জাতির পথ প্রদর্শন। একটি জাতির এগিয়ে যাওয়া, তার শোষণ-বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরা, বিদ্যমান পরিস্থিতি বিশ্বপরিমণ্ডলে তুলে ধরা এবং সামরিক-অসামরিক কৌশলে সংমিশ্রিত ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। যতকাল বাঙালি থাকবে, বাংলাদেশ থাকবে ,বাঙালি সত্তা থাকবে ৭ মার্চের ভাষণ অনিবার্য হয়ে থাকবে। 

তিনি আরও বলেন, যখনই ভাবি আমরা বাঙালি, আমরা স্বাধীন, যখনই লাল-সবুজের পতাকার কথা ভাবি সবকিছুর শেকড়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সেই উদাত্ত আহ্বান, কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন কেউ আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না।

মন্ত্রী আরও বলেন, ৭ মার্চ বাঙালি জাতির একটি ম্যাগনাকার্টা। অতি স্বল্প সময়ে কোনো প্রস্তুতি ছাড়া পূর্বের ইতিহাস, বঞ্চনার ইতিহাস, বিদ্যমান পরিস্থিতি, সমঝোতার পথ এবং সমঝোতা না হলে বিকল্প কি করতে হবে সব বিষয়ে সুচিন্তিতভাবে রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি দিয়ে বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেছিলেন ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে। সে ভাষণে বঙ্গবন্ধু তার অনুপস্থিতিতে বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কেও বলে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধে গোটা জাতিকে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশনাও সেদিন বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে দিয়েছিলেন। সে আলোকে কার্যত বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে হয়তো নিয়মরক্ষার জন্যই বঙ্গবন্ধুকে ২৬ মার্চ আবার স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে হয়।

তিনি আরও যোগ করে বলেন, ৭ মার্চ একটি জাতির সবকিছুর নির্দেশদাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সমগ্র দেশ সেদিন পরিচালিত হয়েছিল বাঙালির নির্বাচিত প্রতিনিধি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। সেসময় নির্দেশনা দেওয়ার মতো এখতিয়ারও একমাত্র বঙ্গবন্ধুর ছিল, আর কারো ছিলনা।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, বিশ্বের নির্যাতিত মানুষ যখন মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় উদ্বেলিত হবে, তখন শেকড়ের সন্ধানে ফিরে আসতে হলে জাতীয়তাবাদী ও বিপ্লবী নেতা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে নির্যাস খুঁজে নিতে হবে। কিভাবে স্বাধীনতা সংগ্রাম করতে হয়, মুক্তিযুদ্ধ করতে হয়, শোষণ ও বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা পেতে হয়, পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙতে একটি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করতে হয় তার সবকিছু নিহিত আছে ৭ মার্চের ভাষণে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করতে দেওয়া হয়নি। টেলিভিশন, ফিল্ম আর্কাইভ, রেডিও থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, নষ্ট করা হয়েছিল। সেই ভাষণ ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের মূল্যবান দলিল হিসেবে সংরক্ষণ করেছে।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু এমন একটি আদর্শ, যে আদর্শ কখনো বিলীন হয় না। যে আদর্শ গুলি করে হত্যা করা যায় না। যে আদর্শ ইতিহাস থেকে সরিয়ে রাখলেই বিচ্ছিন্ন করা যায় না।

এদিন সকালে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ দিবস উপলক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন মন্ত্রী। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ, অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ূম ও মো. তোফাজ্জেল হোসেন, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আশরাফ উদ্দীন, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদারসহ মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।  

এমএম/এফকে