নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় রাজধানী
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় রয়েছে রাজধানী ঢাকা। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সংস্থা একযোগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
এই দুই দিবসকে কেন্দ্র করে বুধবার (১৭ মার্চ) শুরু হওয়া দশ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা আগামী শুক্রবার (২৬ মার্চ) পর্যন্ত চলবে। এসব বিশেষ অনুষ্ঠান ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানগুলো নির্বিঘ্নে আয়োজন করতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে বিদেশি অতিথিদের আসা-যাওয়া এবং অবস্থানের জায়গাগুলোতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সোনারগাঁ হোটেলের আশপাশে (যেমন- বাংলামোটর, মগবাজার, কারওয়ান বাজার), বিমানবন্দর, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, শিখা চিরন্তন ও জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড এলাকার আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। এসব এলাকার বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট ও টহলের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন কোনো কিছু মনে হলে নেওয়া হচ্ছে তল্লাশি ও প্রযুক্তিগত সাহায্য। এছাড়া এসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাকধারী সদস্যদের পাশাপাশি রয়েছে সাদা পোশাকের সদস্যও।
বিজ্ঞাপন
র্যাব সূত্রে জানা যায়, জলে-স্থলে এবং আকাশপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এলিট বাহিনীটি। এছাড়া র্যাবের বিভিন্ন চেকপোস্টে সম্প্রতি সংযুক্ত অন-সাইট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম ডিভাইস বসানো হবে। এতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের চেহারা, নাম ও পরিচয় শনাক্ত করা যাবে। ১৭-২৬ মার্চ অনুষ্ঠানের দেশব্যাপী নিরাপত্তা দেবে র্যাব। কেউ যদি আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটাতে চায় তাহলে তাদের শক্তহাতে মোকাবিলা করা হবে। আয়োজিত অনুষ্ঠানে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো আসবে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করবেন। ঝুঁকি পর্যালোচনা করে সব অনুষ্ঠানে ও দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আগাম সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া র্যাব সদর দফতরে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম ও প্রতিটি ব্যাটালিয়নের কন্ট্রোল রুম থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
এছাড়া র্যাব সদস্যরা সব অনুষ্ঠানস্থলে পোশাকে ও সাদা পোশাকে অবস্থান করবেন। গুরুত্বপূর্ণ স্পটে চেকপোস্ট বসানো হবে। চেকপোস্টে অন-সাইট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম ডিভাইস বসানো হবে। এই ডিভাইসের মাধ্যমে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় শনাক্ত করা যাবে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ভেন্যুতে র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও স্পেশাল ফোর্সেস নজরদারি করবে।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) র্যাব মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, উদযাপন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের হুমকি নেই। এছাড়া কোনো ধরনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটলে তা মোকাবিলা করার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানোর জন্য আমরা প্রস্তুতি শেষ করেছি।
এদিকে উদযাপন অনুষ্ঠান ও আগত অথিতিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি পুলিশ সদর দফতর থেকে এ বিষয়ে বিশেষ নজদারি করা হচ্ছে।
বিশেষ এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, বঙ্গন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা ঢাকায় আসবেন। তারা আমাদের সম্মানিত অতিথি। এতো গুরুত্বপূর্ণ মেহমান এর আগে একসঙ্গে ঢাকায় আসতে আমরা দেখিনি। দেশ ও জাতির জন্য এ ধরনের সফর অত্যন্ত সম্মান ও গর্বের। প্রতিটি ভেন্যু নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে।
আগামী দশ দিন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জনগণের চলাচল সীমিত রাখার জন্য তিনি নগরবাসীর প্রতি আবারও অনুরোধ জানান। এ সময় রাজধানীতে কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ মিছিল, মিটিং ইত্যাদি আয়োজন না করার জন্যও সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
এমএসি/জেডএস/এমএমজে