ঢাকা মেডিকেলে আগুনে দুই কোটি টাকার ক্ষতি
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য বরাদ্দ আইসিইউতে অগ্নিকাণ্ডে প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক ঢাকা পোস্টকে এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আইসিইউ'র বেড প্রতি খরচ ধরেন প্রায় ২০ লাখ টাকা। যদি ১০ লাখ টাকা করেও ধরি তাহলে সবমিলে এতে ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক প্রায় দুই কোটি টাকা। এই আইসিইউ এই মুহূর্তে চালানোর মতো অবস্থা নেই। ঘটনা তদন্তের পর নতুনভাবে, আরও উন্নত করে এই আইসিইউ চালু করা হবে। তবে সেটা সময়সাপেক্ষ।
বিজ্ঞাপন
নাজমুল হক বলেন, করোনার জন্য বিশেষভাবে তৈরি এই আইসিইউতে বেড ১৪টি। তাতে ১৪ জন রোগীই ছিলেন। তাদের সবাইকে আলাদা ১০ বেডের একটি আইসিইউ আছে সেখানে ও মানসম্পন্ন কিছু এইচডিইউ আছে সেখানে স্থানান্তর করা হয়। কেউ কিন্তু আগুনে মারা যাননি। স্থানান্তরের পর অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তিন রোগী মারা যান।
তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমাদের করোনার ব্যাপক কার্যক্রম। বলা যায় সারা দেশের করোনা আক্রান্ত অর্ধেক রোগীর চাপ সামলাই আমরাই। আমাদের মোট আইসিইউ ২৪ বেডের। এর মধ্যে ১৪ বেডের আইসিইউতে আগুন লাগে। এছাড়া আমাদের রয়েছে মানসম্পন্ন এইচডিইউ।
বিজ্ঞাপন
তাড়াহুড়ার মধ্যে চালু হয়েছিল এ করোনা আইসিইউ
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত আইসিইউ সম্পর্কে নাজমুল হক বলেন, এই আইসিইউ কিন্তু চালু করা হয় বিশেষ প্রয়োজনে। এটা চালু করার পর ২৪ ঘণ্টা আমাদের এর প্রেসার সামলাতে হচ্ছে। একটা বেড ১০ মিনিটও খালি থাকে না। আমাদের হাসপাতালে এই মুহূর্তে ৫৩৩ জন রোগী রয়েছে করোনার। এর মধ্যে যদি দুই শতাংশ রোগীর জন্যও আইসিইউ বেড প্রয়োজন হয়, তবে তাদের জন্য আইসিইউ বেড বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয় না। চাপের কারণে আমরা এই আইসিইউ বেড মেইনটেন্যান্স ঠিকমতো করতে পারিনি। বিশেষ পরিস্থিতির কারণে কিন্তু অনেকটা তাড়াহুড়া করে আইসিইউ চালু করা হয়েছিল। এই আইসিইউ ২৪ ঘণ্টা চালানোর জন্য যে ধরনের সার্বক্ষণিক সক্ষমতা, স্ট্যাবিলিটি, পারফরমেন্স দরকার সেটা আমরা পারিনি।
আমাদের অনুরোধ থাকবে, ক্ষতিগ্রস্ত এই আইসিইউ যখন আবার চালু করা হবে তখন যেন দেখে শুনে বুঝে চালু করা হয়। ২৪ ঘণ্টার পারফরমেন্স, সার্বক্ষণিক সক্ষমতা, স্ট্যাবিলিটি যেন ঠিক থাকে, প্রত্যেকটি মেশিন যেন ঠিক থাকে, সে ধরনের স্টাফ যেন রাখা হয়, সেজন্য ভালো ও অত্যাধুনিক একটি আইসিইউ যেন চালু করা হয়। সেটা আমরা স্বাস্থ্য ডিজি, সচিব ও মন্ত্রীকে জানিয়েছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
আইসিইউ চালু করতে সময় লাগবে
কবে নাগাদ এই আইসিইউ চালু করা সম্ভব জানতে চাইলে তিনি বলে, এটা চালু করা এখনই সম্ভব নয়। এটা আমরা নতুন করে সুন্দর করে তৈরি করব। আগুনে আইসিইউটি যে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তা কিন্তু নয়। আপনারা খোঁজ নিলে জানবেন, অনেক জায়গায় আগুন লাগে, সেখানে কী করে আগুন নেভানো হয়, কত সময় লাগে। সেটা কিন্তু এখানে ঘটেনি। আমাদের এখানে খুবই তড়িৎ গতিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছি। অত্যন্ত অভিজ্ঞ জনবল এখানে কাজ করে। আগুনে আসলে জানমালের ক্ষতি যা হওয়ার তা আগেই হয়ে যায়। আমরা সেসব পরবর্তী সময়ে ঠিক করব। আমাদের বেজটা অনেক স্ট্রং এখানে। অনেক পাইপলাইন, অক্সিজেন, ভ্যাকুয়াম। বিভিন্ন ধরনের সাপোর্ট দিয়ে তৈরি। যতটা দ্রুত সম্ভব স্ট্যাবল একটি আইসিইউ আমরা তৈরি করব। যেহেতু কোভিডের চাপ রয়েছে, সেজন্য আমরা এটা যতো দ্রুত সম্ভব চালু করব।
ক্ষতিগ্রস্ত আইসিইউ বন্ধ, কীভাবে কোভিড রোগী সামলাবে ঢামেক?
কোডিভের রোগী ফের বাড়ছে। ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউ’র চাহিদাও অনেক। তাহলে এই ক্ষতির চাপ কীভাবে সামলাবেন জানতে চাইলে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, আমাদের এই মুহূর্তে চাপ সামলাতে আইসিইউ দরকার। আমাদের বাকি যে ১০ বেডের আইসিইউ আছে সেটা মূলত সার্জারি আইসিইউ। ওটার কিছু বেড খালি থাকত। সেখানে আমরা মেডিসিনের রোগীদের পাঠাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের ওখানে আরেকটি ভালো স্পেস আছে, তা হলো পোস্ট অপারেটিভ। এটা আইসিইউয়ের মতোই মানসম্পন্ন। সেখানে আমরা আইসিইউ মানের চিকিৎসা সেবা চালু করব... আমাদের যে সমস্ত হাইডিপেনডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) আছে... ক্ষতিগ্রস্ত আইসিইউ চালুর আগ পর্যন্ত আমরা এই এইচডিইউগুলো আরও উন্নত করে আইসিইউ’র চাপটা সামলানোর পরিকল্পনা করেছি।
বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য বরাদ্দ আইসিইউতে আগুন লাগে। ওই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে ওই রোগীদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়। অবশ্য তাদের কারও মৃত্যু আগুনে হয়নি।
আগুনে মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- ১১ নং বেডের আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (৪৮), ৯ নং বেডের কাজী গোলাম মোস্তফা (৬৬) ও কিশোর চন্দ্র রায় (৫৮)। এরইমধ্যে কিশোর চন্দ্র রায়ের মরদেহ তার স্বজনরা নিয়ে গেছেন।
জেইউ/এনএফ/এমএমজে