মাদারগঞ্জে তিন ফসলি জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে অন্যত্র স্থানান্তর করাসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছে ৭৫০ একর কৃষি জমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি।

রোববার (১৯ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানানো হয়।

৭৫০ একর কৃষি জমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির অন্যান্য দাবিগুলো হচ্ছে, বগুড়া জেলার ধরাবর্ষা মৌজার একাংশে ভুয়া জেএল, ভুয়া মৌজা তৈরি করে খাস খতিয়ানে এনে কৃষকদের জমি হরণের চেষ্টা বন্ধ করতে হবে; মাদারগঞ্জে কৃষি জমি রক্ষায় আন্দোলনকারীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তার হওয়াদের মুক্তি দিতে হবে; বিনা ক্ষতিপূরণে কৃষকের জমিতে কোনো প্রকল্প মানি না, তিন ফসলি জমিতে প্রকল্প নেওয়া যাবে না; অবিলম্বে ভূমি আইন ২০২২ সংসদে পাস, চরাঞ্চলে ডিএস, সিএস, এসএ, আরএস রেকর্ড ও চিটার ভলিউম দেখে প্রজাস্বত্ব বহাল ও খাজনা-খারিজ চালু করতে হবে; নদী ভাঙন রোধে ও জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং চরাঞ্চল, বীর অঞ্চল ও শহরে ভিন্ন ভিন্ন জমির সিলিংএর বন্দোবস্ত রেখে সারাদেশে গ্রাম-শহরে ব্যক্তিগত স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির সিলিং পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। উদ্বৃত্ত সম্পত্তি ভূমিহীন-আশ্রয়হীন মানুষের মাঝে বণ্টন করতে হবে।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশের নদী সিকস্তি অঞ্চলে বসবাসকারী তিন কোটি মানুষ জান-মালের ঝুঁকি নিয়ে সকল প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে অনাবাদযোগ্য উঁচুনিচু জমি আবাদযোগ্য করে দেশের কৃষি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সকল গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, কৃষকের ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠায় যুগযুগ ধরে লড়াই করেছে। তাই স্বাধীনতার পর এ অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা ছিল তাদের ভাগ্যের বদল হবে। কিন্তু স্বাধীন দেশে সমস্যার সমাধান হয়নি বরং উপনিবেশিক শাসন আমলের আদলে নতুন আইন ও আইনের সংশোধন করে বাপ দাদার পৈতৃক জমির অধিকার হরণ করা হয়েছে। আইনের মারপ্যাঁচে আজ চরের মানুষ তার পৈতৃক জমির প্রজাস্বত্ব হারিয়েছে। এই সুযোগ নিয়ে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জএ প্রভাবশালী স্বার্থান্বেষী মহল কৃষকদের জমি জবরদখল করে তিন ফসলি জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে তোড়জোড় শুরু করেছে।

তারা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন তিন ফসলি জমিতে কোনো প্রকল্প নয় এবং কোনো জমি পতিত রাখা যাবে না। এরা লুটেরা গোষ্ঠীর স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অগ্রাহ্য করে কৃষকদের বঞ্চিত করে যেখানে বিদ্যুতের সুব্যবস্থা আছে, সেখানেই সৌর-বিদ্যুৎ প্রকল্প করতে চায়। আর কৃষকরা যাতে ক্ষতিপূরণ না পায় সেজন্যে প্রভাব খাটিয়ে বগুড়া জেলার ধরাবর্ষা মৌজার একাংশ জামালপুর জেলার সঙ্গে যুক্ত করে কাইজার চর নামে ভুয়া মৌজা তৈরি করে খাস খতিয়ানে এনে প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। এই অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না। তাই কৃষকরা আন্দোলনে আছে এবং স্থানীয় কৃষকরা তাদের জমির প্রজাস্বত্ব ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে মামলা করায় স্বার্থান্বেষী মহলটি ক্ষিপ্ত হয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের জেল-হাজতে পাঠাচ্ছে, রিমান্ডে দিচ্ছে।

বক্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমাদের এই ন্যায়সঙ্গত দাবি বাস্তবায়নে দ্রুত উদ্যোগ নিন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। সংগ্রাম কমিটির ৭ দফা দাবি আদায়ে চলমান লড়াই জোরদার করার জন্যে চরাঞ্চলে গ্রামে গ্রামে কমিটি করে আন্দোলন করা হবে।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ‘৭৫০ একর কৃষি জমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’ ও ‘চরাঞ্চলের কৃষি ও কৃষক স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’র আহ্বায়ক নাটুয়াপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রবীণ কৃষক নেতা আব্দুল কাদের, সংগ্রাম কমিটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও কৃষক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক কৃষক নেতা জাহিদ হোসেন খান, জামালপুর জেলার কৃষক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আক্কাস, কবি ও সুরকার আলতাফ হোসেন মাস্টার, কৃষক সমিতি সিরাজগঞ্জ জেলার নেতা গোলাম ফারুক বিএসসি, বগুড়া জেলার নেতা মো. আইনুদ্দিন, ভুক্তভোগী কৃষক আব্দুল মান্নান আকন্দ, আশরাফ আলী প্রমুখ।

এমএইচএন/এসকেডি