জাতীয় সংসদে কর্ণফুলী নদীর ওপরে নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণের দাবিতে সোচ্চার থাকবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বেসরকারি ফলে বিজয়ী প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ।

বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে নির্বাচনের ফল ঘোষণা শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

এ সময় নোমান আল মাহমুদ বলেন, এ জয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি একজন তৃণমূলের কর্মী ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী আমাকে মূল্যায়ন করেছেন এবং জনগণ তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আমি নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। আমার বিজয়কে তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করলাম।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামের নেতা-কর্মীরা অত্যন্ত কষ্ট করে আমাকে নির্বাচিত করেছেন, এজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি সংসদে গিয়ে চট্টগ্রামবাসীর উন্নয়নের কথা বলব। বিশেষ করে আমার এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি কালুরঘাট সেতু। এ বিষয়ে আমি সংসদে সোচ্চার থাকব। চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়নের কথা বলব। 

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের পাশে জিমনেসিয়ামে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান ফল ঘোষণা করেন। এতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ ভোট পেয়েছেন ৬৭ হাজার ২০৫টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোমবাতি প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৮৭ ভোট।

এছাড়া চেয়ার প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পান ১ হাজার ৮৬০ ভোট, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি- এনপিপির কামাল পাশা ৬৭৩ এবং একতারা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী রমজান আলী ৪৮০ ভোট পান।

উপনির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ জন। তাদের মধ্যে ৭৫ হাজার ৩০৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। শতকরা হিসাবে যা মোট ভোটারের ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ১৯০টি কেন্দ্রের ১ হাজার ৪১৪টি কক্ষে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এরপর ভোট গণনা শেষে রাতে ফল ঘোষণা করা হয়।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ শেষে ফল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন ঘিরে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পর্যাপ্ত পুলিশ, আনসার ও র‍্যাব মোতায়েন ছিল। পাশাপাশি জুডিশিয়াল এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেছেন।

মূলত নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতো কোনো প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় শুরু থেকে নিরুত্তাপ ছিল। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। জয় নিশ্চিত জেনে ভোটার কাছে গিয়ে তেমন গণসংযোগ করেননি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ। দলীয় মনোনয়ন পেয়েই নেতাকর্মীদের অভিনন্দনের পোস্টার-ব্যানারে ভাসছেন তিনি। অন্যান্য প্রার্থীর গণসংযোগও তেমন দেখা যায়নি।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি হাসপাতালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদ মৃত্যুবরণ করেন। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। পরে আসনশূন্য ঘোষণার গেজেট ইসিতে এলে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করে কমিশন।

এ আসনটি এর আগেও একবার শূন্য হয়েছে ২০১৯ সালে। মহাজোটের শরিক হিসেবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নেতা মইন উদ্দিন খান বাদল ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। পরে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারির উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদে এসেছিলেন মোছলেম উদ্দিন আহমদ।

এমআর/এসএম