স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের বনভূমি কমেছে প্রায় ৫৩ শতাংশ। আর তাপমাত্রা গড়ে প্রায় এক ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো বেড়েছে।  এছাড়াও নানা পরিবর্তন হয়েছে দেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও পরিবেশের।

শুক্রবার (২৬ মার্চ) সবুজ আন্দোলন নামের পরিবেশবাদী সংগঠন ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে পরিবেশ বিপর্যয় ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় লিখিত বক্তব্যে এসব তথ্য তুলে ধরে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্র পরিষদ এ সভার আয়োজন করে।

তবে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ৭১ সাল থেকে আবহাওয়ার তথ্য সেভাবে লিপিবদ্ধ নেই। আমরা গত ৩০ বছরের একটা পরিসংখ্যান থেকে বলতে পারি যে তাপমাত্রা ০.৬২ থেকে ০.৬৭ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া নির্দিষ্ট করে বলার সুযোগ নেই তাপমাত্রা কতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ তাপমাত্রা একেক সময়ে একেক রকম থাকে।

আলোচনা সভায় সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। অঞ্চলভেদে প্রায় ২.৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭১-৭২ সালে গড়ে ২৫.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ২০২০-২১ সালে গড়ে প্রায় ২৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া গত ৫০ বছরে শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে প্রায় ৫৩ ভাগ বনভূমি কমেছে।

আলোচনা সভায় সবুজ আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশ অর্থনৈতিকভাবে যতখানি এগিয়েছে, পরিবেশগত সমস্যা ততটাই প্রকট হয়েছে। অবৈধ ইটভাটা ও অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে আবাসযোগ্য জমির পরিমাণ কমেছে ৩১ শতাংশ।

তারা জানান, ক্ষতিকর কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার বেড়েছে ৫৮ ভাগ। উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে ব্যবহারের পরিমাণ আরও বেশি। দেশের ১১০টি নদী অস্তিত্ব হারিয়েছে। স্বাধীনতার শুরুতে ৩৫১টি নদী থাকলেও বর্তমানে ২৪১টি নদী রয়েছে। দখল ও দূষণের শিকার শতকরা ৯৮ ভাগ নদী।

আলোচনা সভায় লিখিত বক্তব্যে জানানও হয়, দেশীয় প্রজাতির ১০৮ ধরনের প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। যার মধ্যে আটটি উভচর, ৯টি সরীসৃপ, ১৩ পাখি ও ১০টি স্তন্যপায়ী প্রাণী চিরতরে হারিয়ে গেছে। বর্জ্য অব্যবস্থাপনায় শতকরা ক্ষতির পরিমাণ ৮১ ভাগ মানুষ। ই-বর্জ্যে ১০ ভাগ, জাহাজভাঙা বর্জ্য পাঁচ ভাগ, মানবসৃষ্ট বর্জ্য ২০ ভাগ, মেডিকেল বর্জ্য আট ভাগ, কলকারখানার বর্জ্য ৩৩ ভাগ ও অন্যান্য পাঁচ ভাগ। এছাড়া নদী ভাঙ্গন কবলে ক্ষতিগ্রস্ত জনসংখ্যা প্রায় ২৯ ভাগ। যার মধ্যে দেশের প্রায় ৩৩টি জেলার জনগণ রয়েছেন।

এসব সমস্যা সমাধানে সংগঠনের পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষি খাতে জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানো। আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতা, যুগোপযোগী কৃষি শিক্ষা, আধুনিক যন্ত্রাংশ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

ই-বর্জ্য অপসারণে বিভাগীয় পর্যায়ে ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ ও মানবসৃষ্ট বর্জ্য অপসারণে ইউনিয়ন পর্যায়ে জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে। নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। শিল্প কলকারখানা বর্জ্য অপসারণে বাধ্যতামূলক ইটিপির ব্যবহার নিশ্চিত করতে আলাদা মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।

সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন সবুজ আন্দোলন পরিচালনা পরিষদের মহাসচিব মহসিন সিকদার পাভেল। সংগঠনটির দফতর সম্পাদক মো সোহেল রানা জানান, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অফিসসহ বিভিন্ন সোর্স থেকে এসব তথ্য নেওয়া হয়েছে।

একে/ওএফ