চক্রের ৬ সদস্য গ্রেপ্তার
‘চেতনানাশক বিস্কুট’ খাইয়ে ইজিবাইক ছিনতাই, চালকের সন্ধান মেলেনি
কোরবানির ঈদকে ঘিরে সক্রিয় ছিনতাইকারীদের চক্করে পড়ে ইজিবাইক হারিয়েছেন ফিরোজ (২২) নামের এক চালক। এছাড়া ঘটনার পর থেকে এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন তিনি। তার পরিবার থানায় নিখোঁজের জিডি করার পর র্যাবের তদন্তে উঠে আসে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়েছিল মো. ফিরোজকে। এরপর তার ইজিবাইকটি ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় ছিনতাইকারী দল।
ইজিবাইক ছিনতাইকারী চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য দিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তবে এখন পর্যন্ত ভুক্তভোগী চালক ফিরোজের সন্ধান মেলেনি।
বিজ্ঞাপন
গ্রেপ্তাররা হলেন— শফিকুল ইসলাম (৪৫), নুর ইসলাম (৩২), গোলাম রাব্বি (২৫), আব্দুর রহমান (২৭), মোছা. সিমা আক্তার (২৮) ও শাহনাজ (৩৭)।
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) রাতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি ও মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব-১০ এর একটি দল।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (৫ জুলাই) বিকেলে র্যাব-১০ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অধিনায়ক (সিও) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
তিনি বলেন, ঈদুল আজহার দু’দিন আগে গত ২৭ জুন ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ প্রতিদিনের ন্যায় জীবিকা নির্বাহের জন্য ইজিবাইক নিয়ে বের হন।
বিকেল পাঁচটার পর থেকে পরিবার ফিরোজের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। সন্ধান না পেয়ে ফিরোজের বাবা কিবরিয়া গাজী পরদিন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
র্যাব-১০ এর একটি দল নিখোঁজ ইজিবাইক চালক ফিরোজকে উদ্ধার করতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্তের ভিত্তিতে ছিনতাইকারী চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
এসময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত চেতনানাশক মিশ্রিত বিস্কুট, চেতনানাশক ওষুধ, ভিকটিম ফিরোজের মোবাইল ফোন ও একটি চোরাইকৃত সিএনজিচালিত অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ২৭ জুন শফিকুল, নুর ইসলাম, গোলাম রাব্বি, আব্দুর রহমান, সিমা আক্তার ও শাহনাজ ইজিবাইক ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে কেরানীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ এলাকায় অবস্থান নেয়। নুর ইসলাম, গোলাম রাব্বি, সিমা ও শাহনাজ হাসনাবাদ গরুর হাটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ফিরোজের ইজিবাইক ভাড়া করে।
সেখানে যাওয়ার পর নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বিকে ইজিবাইক চালক ফিরোজের সঙ্গে চা-বিস্কুট খেতে বলে সিমা ও শাহনাজ গরু হাটে চলে যায়। অতঃপর নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বি তাদের কাছে থাকা চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুটের অনুরূপ এক প্যাকেট বিস্কুট নিকটস্থ চায়ের দোকান থেকে কিনে আনে। তারা কৌশলে বিস্কুটের প্যাকেটটি পরিবর্তন করে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট ইজিবাইক চালক ফিরোজকে খাওয়ায়।
পরবর্তী সময়ে নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বি ভিকটিম ফিরোজসহ ইজিবাইকে গিয়ে বসে। ফিরোজের শরীরে চেতনানাশক ওষুধের ক্রিয়া শুরু হলে তারা ইজিবাইকসহ ফিরোজকে কাউটাইল এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বি ভিকটিম ফিরোজকে বেসামাল অবস্থায় গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে ইজিবাইক নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার পাগলা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে তাদের দলনেতা শফিকুল ইসলামের কাছে ইজিবাইকটি হস্তান্তর করে। শফিকুল ইসলাম ইজিবাইকটি শহিদ নামক এক ব্যক্তির কাছে মাত্র ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়।
র্যাব-১০ অধিনায়ক মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, গ্রেপ্তার শফিকুল ইসলাম অজ্ঞান পার্টি চক্রটির দলনেতা। সে পেশায় একজন সিএনজি চালক। পেশার আড়ালে সে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে অটোরিকশা/ইজিবাইক ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব দেন। তার কাছ থেকে চোরাই অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদক, চুরি, অসাধুভাবে চোরাই মালামাল বেচা-কেনাসহ চারটি মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তার নুর ইসলাম পেশায় ট্রাকের হেলপার। সে শফিকুলের নেতৃত্বে অটোরিকশা ও ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালকদের চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খাওয়ানোর দায়িত্ব পালন করে থাকে।
গ্রেপ্তার গোলাম রাব্বি পেশায় একজন ইজিবাইক চালক। সে চালকদের চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খাওয়ানো ও ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করে।
গ্রেপ্তার আব্দুর রহমান পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। সে ছিনতাই করা অটোরিকশা চালানোর দায়িত্ব পালন করে। তার কাছ থেকে ভিকটিম ফিরোজের মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার শাহনাজ বিস্কুটের ক্রিমের সঙ্গে মেশানোর জন্য নিষিদ্ধ চেতনানাশক ওষুধ অবৈধভাবে দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সংগ্রহ করতে। সে শফিকুল ইসলামের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত। সেখানে অবস্থান করে তারা এই কায়দায় ইজিবাইক ও অটোরিকশা ছিনতাইয়ে সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিল।
গ্রেপ্তার সিমা আক্তার শাহনাজের সঙ্গে বিস্কুটে নিষিদ্ধ চেতনানাশক ওষুধ মেশানো এবং অটোরিকশা ও ইজিবাইক ভাড়া করে তাদের পূর্ব-পরিকল্পিত স্থানে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করে। সিমার কাছ থেকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত চেতনানাশক মিশ্রিত বিস্কুট ও চেতনানাশক ওষুধ উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। নিখোঁজ চালকের সন্ধানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জেইউ/কেএ