পশ্চিমাদের সঙ্গে চীন-রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি নিয়ে কৌশলী মোমেন
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সঙ্গে চীন-রাশিয়ার পাল্টাপাল্টিকে স্রেফ তাদের ‘বক্তব্য’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
শনিবার (৮ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এমন কৌশলী জবাব দেন মন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পাশ্চাত্যের সঙ্গে চীন-রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি বক্তব্যকে কীভাবে দেখে বাংলাদেশ? এমন প্রশ্ন রাখা হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। জবাবে মোমেন বলেন, এটা তাদের বক্তব্য। আমাদের কিছু বলার নাই।
এ সময় মন্ত্রী প্রশ্ন করা সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়ার পরামর্শ দেন।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে অনেক আগ থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কথা বলে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতিও প্রণয়ন করেছে। শুধু তাই নয়, ওয়াশিংটন থেকে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের ঢাকায় সিরিজ সফরও চলমান রয়েছে। সামনে দেশটির পক্ষ থেকে এসব কর্মযজ্ঞ আরও বাড়ারও ইঙ্গিত রয়েছে।
এছাড়া মার্কিনীদের মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) তাদের অবস্থান থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সরব রয়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ সরব অবস্থানে, তখন চুপ করে বসে থাকার কথা না পশ্চিমাদের শক্রখ্যাত চীন-রাশিয়া।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায়, অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক নীতি সমুন্নত রাখতে ও নিজেদের বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই একটি উন্নয়নের পথ অনুসরণের প্রশ্নে বাংলাদেশকে আমরা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি।
ওয়েনবিন বলেছিলেন, নিজেদের জাতিগত বৈষম্য, বন্দুক সহিংসতা এবং মাদক সমস্যার সমাধান না করে একটি নির্দিষ্ট দেশ দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশ ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে আসছে।
গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা মস্কোতে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচন কীভাবে হবে, সেটা দেশটির আইনেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। কাজেই বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের রাজনীতিবিদদের তৎপরতাকে নব্য উপনিবেশবাদ ছাড়া কী বলা যেতে পারে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে স্লোভাকিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ইভান স্টিফেনেককে লেখা চিঠির জবাব দিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল। গত বৃহস্পতিবার স্টিফেনেককে লেখা চিঠির জবাবে বোরেল বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের বিষয়ে দেশটির সরকার ও সব অংশীজনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সদস্যদেশগুলো নিবিড়ভাবে যুক্ত থাকবে।
ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধানের বক্তব্য নিয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি যা বলেছেন, এটা নিয়ে কোনো অসুবিধা নেই। আমরা গণতন্ত্র সমুন্নত করতে চাই। আমরা মানবাধিকার চাই। আমাদের দেশে আমরা এগুলো করি, করেও যাব। এসবের ওপরে যদি আলোচনা হয়, ভালো। আমরা নির্বাচন করে যাচ্ছি এবং সুন্দর নির্বাচন করতে চাই।
মোমেন বলেন, তিনি সংলাপের কথা বলেছেন, এটা তাদের বক্তব্য। আমাদেরও কোনো আপত্তি নাই। যদি ইতিবাচক অবস্থান থাকে আমাদের নিশ্চই আপত্তি থাকার কথা না। আমরা দেশের মঙ্গল চাই।
এ সময় সংলাপ প্রসঙ্গে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে মোমেন বলেন, আমরা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কথা বলতে চাই না।
ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিক্যাব) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সংগঠনের সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস বক্তব্য রাখেন।
এনআই/এসএম