নির্বাচন উপলক্ষ্যে ২৬১ গাড়ি কিনতে চায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
সারাবিশ্বের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির মন্দাবস্থার কারণে সরকারি পর্যায়ে সব ধরনের নতুন গাড়ি কেনায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত ২ জুলাই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর ১৭ দিন পর বুধবার (১৯ জুলাই) জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য নতুন ২৬১টি গাড়ি কেনার চাহিদা পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এসব গাড়ি কিনতে সরকারের খরচ হবে ৩৮০ কোটি টাকা।
অর্থ সচিবের কাছে পাঠানো চাহিদার চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে। এরমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অন্যতম। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ নানা কাজেই মাঠ প্রশাসনের ব্যস্ততা বাড়বে। এসব কাজে জেলা প্রশাসক আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য নতুন জিপ প্রয়োজন। ৬১ জেলা প্রশাসকের জন্য ৬১টি এবং ২০০ জন উপজেলা প্রশাসকের জন্য ২০০টি গাড়ির চাহিদা পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি গাড়ির দাম ধরা হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
বিজ্ঞাপন
ডিসি-ইউএনওদের জন্য মিতসুবিশি পাজেরো স্পোর্টস (QX.) জিপ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে ৬১ জন জেলা প্রশাসকের জন্য ৬১টি গাড়ি কিনতে খরচ হবে ৮৮ কোটি ৯৬ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা। ২০০ ইউএনওর জন্য একই মডেলের গাড়ি কিনতে খরচ হবে ২৯১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। সর্বমোট খরচ হবে ৩৮০ কোটি ৬৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা।
গাড়ি কেনার পক্ষে মতামতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, মাঠ পর্যায়ে যেসব গাড়ি আছে তার বেশিরভাগ গাড়িরই মেয়াদ প্রায় শেষ। এজন্য নতুন গাড়ির প্রয়োজন।
বিজ্ঞাপন
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে এসব গাড়ি চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। টাকা দেবে কি না সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত।
চিঠিতে নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, সরকারি যানবাহন কেনার পর ১০ বছর পর তা প্রতিস্থাপনের বিধান রয়েছে। চলমান অর্থনৈতিক মন্দা বিবেচনায় নিয়ে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের জন্য অর্থ বিভাগকে ১৩ বছর বা তদূর্ধ্ব ও ব্যবহার অনুপযোগী ৪৬১টি গাড়ি (জেলা প্রশাসনের জন্য ১৬টি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের জন্য ৩৬৫টি গাড়ি) কেনার জন্য বাজেট বরাদ্দের অনুরোধ জানানো হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিস্তারিত আলোচনা হয়। পাশাপাশি অর্থ বিভাগের পরামর্শক্রমে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর থেকে প্রথম খাপে ১৩ বছরের স্থলে ১৪ বছর বা তদূর্ধ্ব ও ব্যবহার অনুপযোগী এমন ২৬১টি গাড়ি প্রতিস্থাপন করার জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ২ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন দিয়ে বলা হয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সব ধরনের গাড়ি, বিমান ও জাহাজ কেনাকাটায় বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এছাড়া উন্নয়ন বাজেটের আওতায় নতুন গাড়ি কেনা বন্ধ এবং প্রকল্পের অর্থছাড় পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। সব ধরনের আবাসিক, অনাবাসিক, অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে বরাদ্দে অর্থ ব্যয়ও বন্ধ থাকবে। বৈদেশিক ভ্রমণ, কর্মশালা, সেমিনারে অংশগ্রহণ এবং ভূমি খাতের অধিগ্রহণ বাবদ বরাদ্দ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ১০ বছরের অধিক পুরোনো মোটরযান প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় নির্বাহ করা যাবে।
এছাড়াও সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সাশ্রয় করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ খাতের সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ এবং জ্বালানি খাতের বরাদ্দে সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ খরচ করা যাবে বলেও নির্দেশনায় বলা হয়।
আবাসিক ভবন, অনাবাসিক ভবন এবং অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। সব ধরনের মোটরযান, জলযান ও আকাশযান খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে, ১০ বছরের অধিক পুরোনো মোটরযান প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় নির্বাহ করা যাবে; এবং ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে।
এনএম/কেএ