পর্যালোচনায় ডিসি-ইউএনওদের ২৬১ গাড়ি
৭০ বিলাসবহুল গাড়ি কেনার প্রস্তাব নাকচ
বৈশ্বিক সংকটে কৃচ্ছ্রসাধননীতি গ্রহণ করেছে সরকার। এই নীতিতে সরকারি সব ধরনের গাড়ি কেনাকাটায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর মধ্যেই গাড়ি কেনার বিলাসিতায় নামে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর। অধিদপ্তরটি ইতোমধ্যে ভিভিআইপি ও বিদেশি ডেলিগেট এবং মন্ত্রীদের জন্য সর্বমোট ৭০টি বিলাসী গাড়ি কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল। যা নাকচ করে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য আরও ২৬১টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব পর্যালোচনায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
নির্বাচনে আগে ভিভিআইপি ও রাষ্ট্রীয় অতিথিদের জন্য জন্য ২০টি মার্সিডিস বেঞ্জ কার (এস ক্লাস-স্যালুন-ডব্লিউভি ২২৩) এবং মন্ত্রীদের জন্য ৫০টি টয়োটা ক্যামরি হাইব্রিড সেডান কার কেনার প্রস্তাব অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠায় পরিবহন অধিদপ্তর। ২০টি মার্সিডিজ বেঞ্জ কারের দাম ধরা হয়েছিল সাড়ে ৩ কোটি টাকা। মন্ত্রিসভার সদস্যদের গাড়ি দাম ধরা হয় ১ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এই ৭০টি বিলাসবহুল গাড়ি কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে ১৯ জুলাই জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য নতুন ২৬১টি গাড়ি কেনার চাহিদা পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এসব গাড়ি কিনতে সরকারের খরচ হবে ৩৮০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন>>নির্বাচন উপলক্ষ্যে ২৬১ গাড়ি কিনতে চায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
বিজ্ঞাপন
অর্থ সচিবের কাছে পাঠানো চাহিদার চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে। এর মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অন্যতম। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ নানা কাজেই মাঠ প্রশাসনের ব্যস্ততা বাড়বে। এসব কাজে জেলা প্রশাসক আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য নতুন জিপ গাড়ি প্রয়োজন। ৬১ জেলা প্রশাসকের জন্য ৬১টি এবং ২০০ জন উপজেলা প্রশাসকের জন্য ২০০টি গাড়ি চাহিদা পাঠিয়েছে। প্রতিটি গাড়ির দাম ধরা হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
দুটি লটে এসব গাড়ি চলতি অর্থবছরে এই টাকা বরাদ্দ দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়েছিল সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর। কিন্তু বৈশ্বিক সংকট ও সরকারের কৃচ্ছ্রসাধননীতির কারণে বিলাসবহুল গাড়ি কেনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে অর্থ বিভাগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের পরিবহন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর রোববার সকালে ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুটি লটে যেসব গাড়ি কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে তা যানবাহন অধিদপ্তর নিজেরা করেনি। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার চাহিদার প্রেক্ষিতে করা হয়েছে। এর মধ্যে ভিভিআইপি, বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথি ও মন্ত্রিসভার সদস্যের জন্য গাড়ি কেনার প্রস্তাব অর্থবিভাগ থেকে তা নাকচ হয়েছে।
ডিসি-ইউএনওদের গাড়ি কেনার প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই প্রস্তাব চারদিন আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ বিভাগ পর্যালোচনা করে কি সিদ্ধান্ত দেয় সেদিকে তাকিয়ে আছি।
চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সব ধরনের গাড়ি, বিমান ও জাহাজ কেনাকাটা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। ২ জুলাই এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, উন্নয়ন বাজেটের আওতায় নতুন গাড়ি কেনা বন্ধ এবং প্রকল্পের অর্থছাড় পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। তবে ১০ বছরের অধিক পুরোনো মোটরযান প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় নির্বাহ করা যাবে।
এ ছাড়াও সব ধরনের আবাসিক, অনাবাসিক, অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে বরাদ্দে অর্থ ব্যয়ও বন্ধ থাকবে। বৈদেশিক ভ্রমণ, কর্মশালা, সেমিনারে অংশগ্রহণ এবং ভূমি খাতের অধিগ্রহণ বাবদ বরাদ্দ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নির্দেশনায়।
এছাড়াও সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সাশ্রয় করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ খাতের সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ এবং জ্বালানি খাতের বরাদ্দে সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ খরচ করা যাবে বলেও নির্দেশনায় বলা হয়।
সকল আবাসিক ভবন, অনাবাসিক ভবন এবং অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। সব প্রকার মোটরযান, জলযান ও আকাশযান খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী বুধবার (১৯ জুলাই) ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের জেলা প্রশাসক অফিস ও উপজেলা নির্বাহী থেকে এসব গাড়ি চাহিদার প্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনেক গাড়িগুলো চলাচলের অনুপযোগী তাই এসব চাহিদা দেওয়া হয়েছে। টাকা দেবেন কি না সেটা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত।
এনএম/এমএ