চট্টগ্রামে সরকারি সংস্থার প্রকল্প বাস্তবায়নে লাগবে অনাপত্তিপত্র
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, অন্য সরকারি সংস্থাগুলোকে চসিকের আওতাধীন এলাকায় প্রকল্প গ্রহণ করতে হলে অনাপত্তিপত্র নিতে হবে। আমরা রাস্তা বানাব আর অন্য সংস্থা রাতের আঁধারে রাস্তা কেটে ফেলবে, এভাবে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম গড়া সম্ভব নয়। চট্টগ্রামে বর্তমানে জনসংখ্যা ৭০ লাখ, যা আবার প্রতিদিন বাড়ছে। এই বাড়তি চাপ মোকাবিলায় সবগুলো সরকারি সংস্থা জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ না করলে নিকট ভবিষ্যতেই চট্টগ্রাম বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) নগরের নন্দনকাননের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে নির্বাচিত ৬ষ্ঠ পরিষদের ৩০তম সভায় তিনি এ কথা বলেন। এসময় নগরের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হলেও কেন্দ্রে ছিল সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের দাবি।
বিজ্ঞাপন
ডেঙ্গু প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ডেঙ্গুর উৎস সন্ধানে পরিচালিত অভিযানে নির্মাণাধীন ভবনে সবচেয়ে বেশি লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রামে অনেক সরকারি ভবন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, এ ভবনগুলোতেও যাতে ডেঙ্গুর প্রজননক্ষেত্র না থাকে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। চসিকের পক্ষে মশা নিয়ন্ত্রণে ক্রাশ প্রোগ্রাম চলছে। দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার সেবা। প্রয়োজনে করোনাকালের মতো চসিকের পরিচালিত হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীদের জন্য পৃথক বিশেষায়িত কেন্দ্র চালু করা হবে।
অনেকে ড্রোন ব্যবহারের সমালোচনা করছেন। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে আমরা পিছিয়ে থাকতে পারি না। ড্রোনের কারণে বহুতল ভবনে মশার প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত করা যাচ্ছে অনেক দ্রুত। সুইমিং পুল, ছাদ বাগান, বারান্দায় টবে জমে থাকা পানি মশা প্রজনন কেন্দ্র হয়ে উঠছে। জনসাধারণের সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
বিজ্ঞাপন
যেসব ওয়ার্ডে ময়লার এসটিএস নেই সেখানে এসটিএস গড়ার পাশাপাশি নতুন ল্যান্ডফিলের জন্য ভূমি নির্ধারণের কাজ চলছে বলে জানান মেয়র।
ট্রাফিক বিভাগের সহযোগিতা চেয়ে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের অধিকাংশ এলাকায় যথেষ্ট রাস্তা থাকলেও যানজট হচ্ছে। যার মূল কারণ অবৈধ পার্কিং। আমি কলকাতায় নিউ মার্কেটে দেখেছি সেখানে রাস্তা প্রশস্ত না হলেও ১০০ রুপি দিয়ে পে-পার্কিং চালু করা হয়েছে। অথচ চট্টগ্রামে এই পে-পার্কিং চালু করতে গেলে কিছু মানুষ দুর্ঘটনার ভয় দেখায়। অথচ পোর্ট কানেক্টিং রোডে রাতদিন ডবল লাইন করে অবৈধভাবে ট্রাক-লরি দাঁড়িয়ে থাকে। এসব গাড়ি থেকে চুঁইয়ে পড়া তেলে রাস্তার বিটুমিন ক্ষয়ে যাচ্ছে। মাঝিরঘাটে রাস্তায় ৩০-৪০ টনের গাড়ি চলে নতুন রাস্তা নষ্ট করে ফেলেছে। আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচে দিনরাত গাড়ি পার্কিং করা থাকে।
চসিকের আয় বাড়াতে নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে মেয়র বলেন, আমি মন্ত্রণালয়ে বলেছি বন্দরে প্রত্যেক কন্টেইনার থেকে চার্জ আদায় করতে হবে। কাস্টমসে পৃথক চার্জ আরোপ করতে হবে। শুধু হোল্ডিং ট্যাক্স দিয়ে চট্টগ্রামের মতো বড় শহর চলতে পারে না। অন্য সংস্থাগুলো আয়ের একটি অংশ চসিককে দিলে সে টাকা দিয়ে চট্টগ্রামের অবকাঠামো উন্নয়নের গতি বাড়ানো সম্ভব যা চট্টগ্রামে শিল্পায়ন বাড়াবে। আয় বাড়াতে চসিকের বিদ্যমান ভবনগুলোর ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হবে এবং কাজে লাগানো হবে পতিত ভূমিগুলোকে।
সভায় বিগত সাধারণ সভার কার্যবিবরণী, দরপত্র কমিটির কার্যবিবরণী এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী অনুমোদিত হয়। স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতিগণ তাদের নিজ নিজ কমিটির কার্যবিবরণী পেশ করেন। সভায় প্যানেল মেয়র, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল আসলাম, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলামসহ বিভাগীয় ও শাখা প্রধান এবং নগরের বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এমআর/জেডএস