গভীর শোক, শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য মর্যাদার মধ্য দিয়ে নয়া দিল্লীস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়েছে। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন এবং জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে দিনব্যাপী কর্মসূচির সূচনা করেন।

মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দিবসটি উপলক্ষ্যে সকালে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শুরুতেই বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণীসমূহ পাঠ করা হয়। এসময় বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় এবং জাতির পিতার জীবন ও কর্মের ওপর উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হচ্ছে।

মোস্তাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথ পরিক্রমায় সংঘটিত বিভিন্ন রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর বিচক্ষণ নেতৃত্বের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, চারিত্রিক গুণাবলীর সঙ্গে রাজনৈতিক ধীশক্তির সংমিশ্রণে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন ‘রাজনীতির কবি’।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সহস্র বছরের পুরনো একটি নৃগোষ্ঠীর মধ্যে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটিয়ে তাদের সংঘবদ্ধ করেছেন এবং সুদীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে শোষিত একটি জাতিকে স্বাধীন জাতিতে রূপান্তরিত করেছেন। হাইকমিশনার জাতির পিতার মহান আদর্শ অনুস্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে সবাইকে তাদের প্রয়াস অব্যাহত রাখতে বলেন।

বক্তব্য রাখছেন মোস্তাফিজুর রহমান

এদিন সন্ধ্যায় ‘বঙ্গবন্ধু মানবাধিকার ও স্বাধীনতার অগ্রদূত’ শীর্ষক একটি বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শুরুতেই হাইকমিশনার বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের ওপর আলোকপাত করে সূচনা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

এসময় বিশেষ আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ বলেন, সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, আজকের বাংলাদেশের ঈর্ষনীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সেই সাক্ষ্যই বহন করে।

অনুষ্ঠানের আরেক আলোচক ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব স্মিতা পান্ড বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মূলভিত্তি স্থাপন করেন এবং সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়েই বর্তমানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক ‘সোনালী অধ্যায়’ সূচিত হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল জীবনের উল্লেখযোগ্য কিছু আলোকচিত্র নিয়ে একটি বিশেষ প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়। পরিশেষে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, স্বাগতিক দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তি, সাংবাদিক, মিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং প্রবাসী বাংলাদেশীরা এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

এফকে